বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট অন্যতম। সোনাতলা আঁশ চাষের জন্য অন্যতম উর্বর জমি হচ্ছে পলিমাটি পরা চরাঞ্চল। যমুনার বানভাসী মানুষদের প্রধান আয়ের উৎস পাট, মরিচ, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল। বৈশাখের শেষে চরের বিঘার পর বিঘা জমিতে পাট চাষ করে কৃষকরা। উত্তরীয় ঢল ও মৌসুমি বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় চরের পাট চাষিগণ। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে যমুনা নদীতে বন্যার দেখা দিয়েছে। আগাম বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছে পাটের জমি। সেই সঙ্গে অত্যাধিক খর স্রোতের কারণে অনেক অঞ্চলের পাট ওপড়ে যাচ্ছে পানির সঙ্গে। এতে করে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। উপজেলার তেকানি চুকাইনগর ও পাকুল্যা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ওই চরাঞ্চলে।
উপজেলা পাট অধিদপ্তর ও কৃষি অফিসের তথ্যানুসারে অত্র উপজেলায় ১৬৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাসহ চরাঞ্চলের ২৩০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।
পূর্ব তেকানী গ্রামের পাট চাষি মোখলেছ বললেন, 'আমি এইবার ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কিন্তু বন্যার কারণে প্রায় ৬ বিঘার মতো পাট এখনই কাটতে হচ্ছে। এই পরিপক্ব না হওয়ার কারণে শুধু পরিশ্রম করাই হবে কোনো লাভ হবে না। চর চুকাইনগর এলাকার দুলু বললেন, ৪ বিঘা পাট চাষ করেছি তারমধ্যে ৩ বিঘা জমির পাট পানিতে ডুবে গেছে। যে পাটগুলো ডুবে গেছে তা আর নেওয়া যাবে না। তেকানী গ্রামের ইমদাদুল বললেন একই কথা। তিনি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন তার মধ্যে ২ বিঘা জমির পাট ডুবে গেছে। এখন পাট কাটার কামলা পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম বেশি।'
কথা হলো পার্শ্ববর্তী উপজেলা সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলাল হোসেনের সঙ্গে। তেকানি চুকাইনগর এসেছিলেন পাট কাটার জন্য কামলা খুঁজতে। কিন্তু না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি বললেন, 'আমাদের দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই। আমি এইবার ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। তার মধ্যে ৫ থেকে ৬ বিঘার পাট ডুবে গেছে।' একই এলাকার আফজাল বললেন, 'পানিতে ডুবে ডুবে পাট কাটতে হবে তাই কামলার দাম বেশি। আমার ৮ বিঘা জমির পাট সব ডুবে গেছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।'
আকস্মিক বন্যায় পাট ডুবে যাওয়া ছাড়াও পাটের জাগ ভেসে যাওয়ার কথাও জানালেন তারা। এভাবে ডুবে ডুবে পাট কেটে জাগ দিতে পারলেও দেখা যাবে প্রবল স্রোতের কারণে পাটের জাগ ভেসে গেছে। নৌকা নিয়ে দু'চার দিন খুঁজলে হয়তো দু'একটা পাওয়া যাবে। ভাগ্য খারাপ থাকলে তাও সম্ভব হয় না।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, পাট ১০০ থেকে ১৪০ দিনের ফসল। পানিতে পাট ডুবে গেলে ছাল থেকে শিকর গজায়। পাট গাছের গায়ে শেওলা পরে তাতে করে পাটের মান খারাপ হয়। ভালো দাম পাওয়া যায় না। পরিশ্রমের মূল্য উঠে না।
\হসোনাতলা উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা মিঠু কুমার সাহা বলেন, গত বছর কাঁচা পাট ২৫ শ' থেকে ৩ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। আসন্ন বন্যায় পাট ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবার পাটের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, সোনাতলা উপজেলা যমুনা ও বাঙ্গালী নদী বেষ্টিত। যমুনার চর এলাকায় পূর্ব থেকেই পাটের চাষ বেশি হয়। এরমধ্যে তেকানি চুকানগর, পাকুল্যা ও সোনাতলা ইউনিয়নের ২৩০ হেক্টর জমির পাট বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। যদি পানির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায় তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে।