গাংনীতে পলিথিন ব্যবহারের মহোৎসব

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
মেহেরপুরের গাংনীর সব হাট-বাজারে মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, শাকসবজি, ডিম, তরকারি, ফল ও মিষ্টির দোকানসহ সব ক্ষেত্রেই দিন দিন বাড়ছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। একদিকে পলিথিনের বিপরিতে টিকে থাকার মতো কোনো ব্যাগ বাজারে না থাকা অন্যদিকে আইন বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ না থাকায় সচেতন মানুষের হাতেও দেখা যাচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। পলিথিনের যথেচ্ছা ব্যবহারে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজমির। এ দূষণ বন্ধে প্রশাসনের নেই জোরাল কোনো উদ্যোগ। তবে প্রশাসন বলছে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে। পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধের মাধ্যমে কৃষি আর পরিবেশ রক্ষায় ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন সংশোধন করা হয়। ২০০২ সালের ৯ নম্বর আইনটির সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাশের মধ্য দিয়ে পলিথিন শপিং ব্যাগ বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরি কোনো সামগ্রী, তৈরি, আমদানি, বিক্রি ও বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত-বিতরণ নিষিদ্ধ। এর ব্যত্যয় হলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। অথচ এ আইন লঙ্ঘন করেই প্রশাসনের নাকের ডগায় বাজারগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। গাংনীর দোকানপাট ও বাজার সরেজমিন দেখা যায়, ক্রেতাদের অধিকাংশ মানুষের হাতেই পলিথিন ব্যাগ। তাই সবজি, মাছ, মাংস, ডাল যা-ই কিনছেন, তার জন্য নিতে হচ্ছে আলাদা আলাদা পলিথিন ব্যাগ। শক্ত ও মজবুত পলিথিন ব্যাগে ১০ কেজি পর্যন্ত মালামাল বহন করা যায়। বাজারে পণ্য কিনলেই তা বহনের জন্য বিক্রেতারা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে দেন যার কারণে ক্রেতারা ব্যাগ আনেন না। আবার অনেকেই ব্যাগ না দিলে পণ্য কিনতে চান না এমন অভিযোগ বিক্রেতাদের। গাংনী, বামন্দী ও হেমায়েতপুরসহ কয়েকটি বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয় রাজধানীতে। সেখান থেকে হাতবদল হয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ডিলারদের কাছে চলে আসে। সেখান থেকে সপ্তাহের যে কোনো একদিন কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা এসে তাদের পলিথিন ব্যাগ দিয়ে যান। দোকানে দোকানে ঘুরে বিক্রি করেন এসব পলিথিন ব্যাগ। ব্যবসায়ীদের মতে গাংনী উপজেলায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১০ হাজার পলিথিন বিক্রি হয়। গাংনীর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ক্রেতা কিবরিয়া জানান, এখন আর বাজার করতে গেলে ব্যাগ কেনা লাগে না। কিছু কেনার সময় বিক্রেতারাই পলিথিন ব্যাগে ভরে দেয়। আবার অনেক মুদি দোকানে বিভিন্ন মালামাল আধাকেজি এক কেজি বা দুই কেজি করে মেপে পলিথিন ব্যাগে রেখে দেয় বিক্রির সুবিধার্থে। কাজের মোড়ক বা পাটের তৈরি কোনো ব্যাগই বাজারে নেই। পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রমজান আলী জানান, নিষিদ্ধ এই পলিথিন একই সঙ্গে কৃষিজমি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। এটি একটি অপচনশীল পস্নাস্টিক-জাতীয় পদার্থ, যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত, অবিকৃত থেকে মাটি ও পানি দূষিত করে। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি ও গুণ নষ্ট হয়ে ফলন কমে যায়। এর বাইরে যত্রতত্র পলিথিন পড়ে থাকা, আগুনে পোড়ালে বাতাস দূষিত করা এবং পয়োনিষ্কাশনে বাধা তৈরিসহ নানাভাবে পরিবেশকে দূষিত করে। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এর উৎপাদন ও ব্যবহারে লাগাম টেনে ধরেছিল সরকার। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই আইনটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ঠদের কাছেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার আশার কথাও শোনালেন তিনি।