পটিয়ার চাঞ্চল্যকর রিমা আত্মহত্যা
অবশেষে প্রধান আসামি প্রেমিক মোরশেদ পুলিশের হাতে ধরা
প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
টানা ৬ দিন আত্মগোপনে থাকার পরও শেষ রক্ষা হয়নি চট্টগ্রামের পটিয়ার চাঞ্চল্যকর রিমা আত্মহত্যার মূল প্ররোচনাকারী ও মামলার প্রধান আসামি প্রেমিক মিজানুর রহমান মোরশেদের (৩০)। অবশেষে গত মঙ্গলবার রাতে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থেকে পটিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা যায়, চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মনির আহমদের মেয়ে আকতারের সঙ্গে একই এলাকার মফিজুর রহমানের ব্যাংকার ছেলে মিজানুর রহমান মোরশেদের ২৮ জুন বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। কিন্তু বিয়ের গায়ে হলুদের দিন গত ২৭ জুন প্রেমিক মোরশেদের যৌতুকের চাপ সহ্য করতে না পেরে কলেজপড়ুয়া তরুণী আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় পটিয়া থানায় রিমার বাবা মনির আহমদ বাদী হয়ে বর মোরশেদকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
আত্মহত্যার আগে রিমা লিখে গেছেন একটি চিরকুট। সুইসাইড নোটে রিমা লিখেছেন- 'প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি কর তোমার বিয়ে। অনেক ভালোবেসেছি এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছ। আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না, ভালো থেকো, আজকের দিনেও তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে সেগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না, সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমার পোস্ট মর্টেম করে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিও।'
চিরকুটের শেষে রিমা আরও লিখে গেছেন, 'আর আমার পরিবারকে বলছি মোরশেদকে তোমরা ছাড়বে না। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দিবা।' ঘটনার পর থেকেই প্রেমিক মোরশেদ ও তার পরিবার ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।
রিমার বাবা মনির আহমদ ঘটনার জন্য হবু স্বামী মোরশেদকে দায়ী করে তার শাস্তি চেয়ে বলেন, 'তার লোভের বলি হয়েছে আমার আদরের মেয়ে। তারা বরযাত্রীর পরিবর্তে টাকা চেয়েছে, এতেও আমরা রাজি হয়েছি। তারা কোনো কিছু (যৌতুক) দাবি নেই বলে আসলেও বিয়ের কয়েকদিন আগ থেকে একের পর এক যৌতুক দাবি করে আসছিল। আমি তার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এবং সরকারের কাছে এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।'
নিহত রিমার ভাই আজগর হোসেন বলেন, বিয়েতে বরযাত্রী খাওয়া-দাওয়া বাবদ মোরশেদের পরিবারকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমার বোনের কাছে যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ এবং বিয়ের খরচের জন্য আরও নগদ টাকা দাবি করে। তারা যে এতটা যৌতুকলোভী হবে, আমরা জানতাম না। নিজের প্রাণ দিয়ে আমার বোন তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়ে গেছেন।
পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দীন বলেন, 'ঘটনার পর থেকেই আসামি মোরশেদ পালিয়ে যান। তিনি গত ৬ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। আমাদের বিশেষ টিম দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিশেষ অভিযান চালিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে মোরশেদকে গ্রেপ্তার করে।'