শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তারের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ঠিকাদারা। তার নিকটাত্মীয়দের নামে লাইসেন্স করে সালমা নিজেই এখন ঠিকাদার। বিভিন্ন বড় বড় লাইসেন্স ভাড়ায় এনে স্থানীয় দুই-একজনকে নিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করছেন সালমা আক্তার- এসব অভিযোগ ঠিকাদারদের।
সম্প্রতি জেলার ১২ জন ঠিকাদার তার বিরুদ্ধে সওজ বিভাগের প্রধান কার্যালয়, শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কমিশন বাণিজ্য, নামে বেনামে বিভিন্ন লাইসেন্সে কাজ পাইয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের সম্মানী আদায়সহ নানা অপকর্ম করে সালমা অর্থের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ ওই ঠিাকাদারদের। তবে ইতোমধ্যে সালমা আক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন।
ঠিকাদারদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, শরীয়তপুর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কম্পিউটার অপরেটর সালমা আক্তার দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এই অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। এ সুযোগে তার নিকটাত্মীয়দের নামে অন্তত চারটি লাইসেন্স করে নিজেই ঠিকাদার বনে গেছেন। সালমার আপন দুই ভাইয়ের নামে রয়েল এন্টারপ্রাইজ ও সোহেল এন্টারপ্রাইজ, ভগ্নিপতির নামে আবুল এন্টারপ্রাইজ এবং ভাতিজার নামে রাব্বি এন্টারপ্রাইজ লাইসেন্স করে নিজেই এগুলো পরিচালনা করছেন। এভাবে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই ঠিকাদারা। এছাড়া শরীয়তপুর শহর থেকে পদ্মা সেতু বাইপাস সড়কের চলমান ফোরলেনের অধিগ্রহণ শেষে স্থাপনাগুলো গোপনে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সালমা। এ কাজে তিনি স্থানীয় কয়েকজন দালালকে মাঠে নামিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
শরীয়তপুর সওজ বিভাগের ঠিকাদার সাইফান এন্টারপ্রাইজের স্বত্ব্বাধিকারী সুমন বেপারী বলেন, 'সালমার কাছে সব ঠিকাদার জিম্মি। তার নিকটাত্মীয়দের নামে চারটি লাইসেন্স করে সব ছোট কাজ আরএফকিউ করে ওই লাইসেন্সে বাস্তবায়ন করে। এভাবে সালমা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সড়ক বিভাগের। এছাড়া গত পাঁচ বছর ধরে মাহফুজ খান, ইউনুস ব্রাদার্স, নুরুজ্জামান, মুজাহার এবং আবিদ মুনসুর এই লাইসেন্সগুলো ভাড়া এনে স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে সালমা নিজেই কাজ করেছেন। এখানে তার নিজস্ব একটি বাহিনী তৈরি করেছেন।' শরীয়তপুর সওজ বিভাগের ঠিকাদার মো. জসিম বলেন, 'সালমা সিন্ডিকেট করে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেন। আমরা চাই স্বচ্ছতা। তার জিম্মি দশা থেকে আমরা বাচঁতে চাই।'
শরীয়তপুর সওজ বিভাগের ঠিকাদার মনিরুল ইসলাম রনি বলেন, সালমা দীর্ঘদিন ধরে এখানে থাকায়- একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তার কাছে ঠিকাদাররা কোনো তথ্য চাইতে গেলে খারাপ ব্যবহার করেন। নারী নির্যাতন মামলা দেওয়ার ভয় দেখান। ঠিকাদারা তার ভয়ে তটস্থ থাকেন। সালমার বিরুদ্ধে আমরা যে অভিযোগ করেছি তার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। তদন্তেই তার সব অপকর্ম প্রকাশ পাবে।'
কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তারকে তার আত্মীয়দের নামে লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এসব মিথ্যা অভিযোগ। ওই ঠিকাদাররা কাজ পান না, তাই আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন। মাহফুজ খান, ইউনুস ব্রাদার্স, নুরুজ্জামান, মুজাহার এবং আবিদ মুনসুর এসব ঠিকাদারকে আমি চিনিও না। তাদের নামে কাজ করার প্রশ্নই ওঠে না। সব মিথ্যা, সব ভীত্তিহীন।'
নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, ' কম্পিউটার অপারেটর সালমা আক্তারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। সালমা আক্তারের নিকটাত্মীয়দের লাইসেন্স আছে- আমি তা আগে জানতাম না। আমার সময়ে ওই লাইসেন্সে কোনো কাজও দেওয়া হয়নি। আগে দেওয়া হয়েছিল কিনা এখন বলতে পারব না। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।'