'এলাকা ভর্তি জায়গা আছে। শুধু আমার ছেলের ভাগ্যে একমুঠো মাটি জোটেনি।' কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাটি বলেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় নদীতে ডুবে মারা যাওয়া শিশু প্রলয়ের পিতা গোবিন্দ দাস।
গোবিন্দ দাস আরও জানান, 'গত শনিবার দুপুরে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে আমার ৭ বছরের ছেলে প্রলয় ও আমার প্রতিবেশী রুবেল দাসের ছয় বছর বয়সি ছেলে সূর্য দাস পানিতে ডুবে মারা যায়। বিকালে আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশশ্মানের দেয়ালসংলগ্ন মাটিতে মাটির নিচে সমাধি দিই। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ দাস ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ ১৫ থেকে ২০ জন গ্রামের মুরব্বি আমাকে ডেকে লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন। আমি লাশ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সবার হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তারা আমার কথা শোনেননি। অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির চাপে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় আমি ছেলের লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিই।'
অপর শিশুর পিতা রুবেল দাস বলেন, 'শশ্মানে গোবিন্দ দাসের ছেলের মরদেহ সমাধিস্থ করতে বাঁধার বিষয়টি জেনে আমি বাধ্য হয়ে আমার ছেলের লাশ বস্তুাবন্দি করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি।'
গত শনিবার সন্ধ্যায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুরে পানিতে ডুবে মারা যায় দুই শিশু। তাদের মরদেহ প্রভাবশালীদের চাপে সমাধি থেকে তুলে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে পরিবার। মারা যাওয়া শিশুরা হলো- উপজেলার মামুদপুর গ্রামে গোবিন্দ দাসের ছেলে প্রলয় দাস (৭) ও পাহাড়পুর গ্রামের রুবেল দাসের ছেলে সূর্র্য দাস (৬)।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রলয় ও সূর্র্যসহ একদল শিশু সমেশ্বরী মন্দিরের পাশে একটি মাঠে ফুটবল খেলতে যায়। খেলাধূলা শেষ অন্য শিশুরা চলে গেলেও প্রলয় আর সূর্য পুকুরে নেমে পানিতে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় তাদের মৃতু্য হয়।
পরে দুটি শিশুর মরদেহ সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী শ্মশানের পাশে ভূমিতে মাটিচাপা দিয়ে সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু এলাকার প্রভাশালীরা পরিবেশের ক্ষতি হবে কারণ দেখিয়ে মরদেহগুলো তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে শিশুদের পরিবারকে চাপ দেয়। পরে শিশুদের বাবারা মরদেহ উত্তোলনের পর সেগুলো কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপেশ সরকার বলেন, 'এটি আমার একার সিদ্ধান্ত নয়, গ্রাম কমিটির সবার সিদ্ধান্ত।' কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকার বলেন, 'গ্রামের কমিটির সিদ্ধান্ত হলো শশ্মানের পরিবেশ পরিষ্কার রাখার জন্য পাশে কোন সমাধি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত এলাকার সবার জন্য, আমার একার নয়।'
যোগাযোগ করা হলে বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, 'ঘটনাটি লোকমুখে শুনেছি। এ ঘটনা অমানবিক। শশ্মানতো মানুষের সৎকারের জন্যই। এখানে সমাধিত করা হলে শশ্মানের পরিচ্ছন্নতার বিষয় কেন আসবে।'
আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ বলেন, 'শিশুদের পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এ ঘটনাটিকে অমানবিক মনে করেন হবিগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।