উদ্বোধনের এক বছর পরেই পর্যটন সেবা কেন্দ্রে তালা!
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
জিআই পণ্য হিসেবে সনদ পাওয়া নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর সাদা মাটির পাহাড় দেখতে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে পর্যটন সেবা কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে উদ্বোধন হয়েছিল ২০২১ সালে। এর এক বছর পরেই ইজারা না হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় সেটি। বর্তমানে প্রায় দেড় বছর ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তবে দূর থেকে সরকারি কোনো লোকজন এলে খোলা হয় তালা। প্রতিদিন ঘুরতে আসা পর্যটকরা পাচ্ছেন না এটির সেবা।
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির এই জনপদের প্রায় ১৭ কিলোমিটার জুড়ে এই সাদা মাটির পাহাড়। রয়েছে নীল পানির লেক। এই সৌন্দর্য দেখতে দেশের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন এখানে। কিন্তু সেখানে টয়লেট না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই পর্যটকসহ স্থানীয়দের দাবি পর্যটন সেবা কেন্দ্রটির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
উপজেলা প্রশাসন বলছে, পরিচালনায় ঠিকাদার না পাওয়ায় ও পানির সংকটের কারণে পর্যটন সেবা কেন্দ্রটি খোলা রাখা যায়নি। তবে অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৭ জুন জিআই পণ্য সনদ পায় এই সাদা মাটি। একই বছরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় দুর্গাপুর উপজেলার কুলস্নাগড়া ইউনিয়নের বিজয়পুরে নির্মিত হয় পর্যটন সেবা কেন্দ্র। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর পর্যটন সেবা কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া ও তৎকালীন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান। ১ বছর পর পর ইজারার মাধ্যমে পর্যটন সেবা কেন্দ্রটি পরিচালনার কথা থাকলেও দ্বিতীয় বারের মতো সরকারি মূল্য ১ লাখ ৮১ হাজার টাকায় ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা প্রশাসন। তবে বেশি মূল্যে কোনো ঠিকাদার না নেওয়ায় সেটি তালাবদ্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সাদা মাটির পাহাড়ের প্রবেশ দ্বারেই নির্মিত পর্যটন সেবা কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তালাবদ্ধ থাকায় টয়লেটের প্রয়োজন পড়লে পর্যটকদের আশপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী পর্যটকরা বেশি বিড়ম্বনার শিকার হন। ভিআইপি কেউ এলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লোকজন এসে খুলে দেয় বলে জানান স্থানীয়রা।
ঢাকা থেকে আসা রাশেদুল ইসলাম নামে এক পর্যটক বলেন, 'সাদা মাটির পাহাড় দেখতে পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এলাম। আসার পথেই একটি পর্যটন সেবা কেন্দ্রের সাইনবোর্ড দেখে ভেবেছিলাম ভালো ব্যবস্থা পাব। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সেটিও বন্ধ। মানুষের জরুরি প্রয়োজন বলতে গেলে টয়লেট, সেটিরও আর কোথাও ব্যবস্থা নেই। তাই পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসে অসুবিধায় পড়তে হতে হয়। এর ফলে ধীরে ধীরে পর্যটকদের মধ্যে অনীহা তৈরি হবে।'
অপর পর্যটক নাজমুল হক বলেন, 'এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে চমৎকার। আমরা পরিবার নিয়ে অনেক দূর থেকে ঘুরতে আসি। তাই আমাদের দাবি থাকবে খুব তাড়াতাড়ি যেন পর্যটন সেবা কেন্দ্রটি খুলে দেওয়া হয়।'
এ নিয়ে কুলস্নাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সবুজ মিয়া বলেন, ডাক অর্থাৎ ইজারার মাধ্যমে এটি চলে। কিন্তু বেশি টাকায় কেউ ডাকে নিতে চায় না। শুরুতে এক বছর চলছিল কিন্তু এখন বন্ধ। হঠাৎ নেত্রকোনা কিংবা ঢাকা থেকে সরকারি দপ্তরের স্টাপ এলে খোলা হয়। কিন্তু রেগুলার খোলা হয় না।
দুর্গাপুর ইউএনও রকিবুল হাসান জানান, বিজয়পুরের পর্যটন সেবা কেন্দ্রটি ইজারাদারের মাধ্যমে দিয়ে থাকি। এবারও দরপত্র আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু এটি ইজারা নিতে কোনো পক্ষই আগ্রহী হয়নি। তাই ইজারা কার্যক্রম স্থগিত থাকায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এটি পরিচালনা করি।
তিনি আরও বলেন, এলাকাটি পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে সেখানকার পানির লেভেল নেমে যায়। তখন অনেকটা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। আমরা ইতিমধ্যে চিন্তা করেছি সেখানে সামারসিবল বসিয়ে এটি পর্যটকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী করব।