যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় বেড়েছে নৌকা তৈরির ধুম

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি এ বছর কয়েক দফায় কমেছে এবং বেড়েছে। নতুন পানি আসায় উপজেলার যমুনা পাড়ের বাসিন্দারা নতুন নৌকা তৈরি এবং পুরাতন নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নদীর ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। তাইতো বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে। নদী পাড় এলাকায় কেউ পুরাতন নৌকায় আলকাতরা ও জোড়াতালি দিয়ে নিচ্ছেন। কেউবা নতুন নৌকা তৈরি করছেন। মিস্ত্রিদের ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা ও বাঙ্গালী নদীবেষ্টিত সারিয়াকান্দি উপজেলা বর্ষাকালে বিশাল এলাকা জুড়ে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার এ পানিতে অধিকাংশ মাছ শিকার করে থাকেন। এক চর থেকে অন্য চরে চলাচল করা ছাড়াও খেয়া পারাপার পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে প্রধান বাহন হয় নৌকা। এরই মধ্যে যমুনা ও বাঙ্গালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এ জন্য নৌকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে ব্যাপকভাবে। ফলে এখন নদী পারের মানুষেরা নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলায় পৌর এলাকার গার্লস স্কুল মোড়, বরইকান্দি, পারতিত পরল, কালিতলা, মথুরাপাড়া, রৌহাদহ, চারালকান্দি, শাহানবান্ধা, ডাকাতমারা, জামথল, চরদলিকা, মানিকদাইড়, শংকরপুর নৌঘাটসহ প্রভৃতি নৌঘাটগুলোতে এখন নতুন নৌকা তৈরি এবং পুরাতন নৌকা মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। নৌকা তৈরিতে সাধারণত কড়ই, হিজল, মেহগনি কাঠ বেশি ব্যবহার হয়। তবে কেউ ছোট নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে কাঁঠাল গাছের কাঠও ব্যবহার করে থাকেন। নৌকা তৈরিতে আলকাতরা, তারকাঁটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত একটি ডিঙি নৌকা তৈরি করতে ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক লাগে। তবে নিজে কারিগর নিয়ে নৌকা তৈরিতে একটু খরচ কম পরে। অর্ডার দিয়ে তৈরি করা নৌকা কিনতে গেলে দাম একটু বেশি পড়ে এবং টেকসইও কম হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ হাত থেকে ৬০ হাত পর্যন্ত লম্বা নৌকা তৈরি করছেন এ এলাকার বাসিন্দারা। রকমভেদে এসব নৌকা তৈরিতে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মানুষ খরচ করে থাকে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের ছাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বেশ কয়েকটি গরু এবং ছাগল আছে। প্রতিনিয়ত আমাকে নৌকায় করে চরে যেতে হয় ঘাস আনতে। পুরাতন হয়ে যাওয়া নৌকা তাই বন্যা আসার আগেই মেরামত করছি। একই উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের আব্দুল কালাম বলেন, বিভিন্ন কাজে প্রায়শই নৌকাযোগে উপজেলা সদরে যেতে হয়। তাই নতুন নৌকা তৈরির জন্য কারিগরদের অর্ডার দিয়েছি। নৌকা তৈরির কারিগর উপজেলা কুতুবপুর ইউনিয়নের বরইকান্দি বাজারের বুলু মিয়া জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নৌকা তৈরির অর্ডার বৃদ্ধি পেয়েছে। ছোট ডিঙি নৌকার অর্ডার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে সব সাইজের নৌকাই তৈরি হচ্ছে। ছোট ডিঙি নৌকা সাধারণত ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। নৌকা কত হাত হবে তার ওপরে এর দাম নির্ভর করে। তার দোকানে তিনিসহ ৪ জন কারিগর কাজ করেন। তবে কাজের চাপ বাড়লে কারিগরের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। আকাশমণি, জিগা এবং আম কাঠ তিনি নৌকা তৈরিতে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, সারাবছর আমি ৩শ'টির বেশি নৌকা বানান। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, যমুনা নদীতে চলাচলের জন্য ফিটনেসযুক্ত ভালো নৌকা তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কারিগরদের। এছাড়া নদীপথে চলাচলের জন্য যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেটও ব্যবহার করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।