বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে এ মৌসুমে নতুন পানিতে মাছ বংশ বিস্তারের জন্য ডিম ও রেণু পোনা ছেড়েছে। এ সুযোগে স্থানীয় কিছু অসাধু জেলে মৎস্য নিধনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। তারা যমুনা পাড় জুড়ে পানির মধ্যে শত শত বাঁশ পুঁতে চায়না দুয়ারী, মশারি জাল, বেড়জাল, কারেন্ট জাল ও ডিম জালের ফাঁদে ফেলে পোনা মাছগুলো নিধন করছে।
সরেজমিন যমুনা পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলা যমুনা নদীতে জোয়ারের পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে এলাকাজুড়ে শত শত বাঁশ পুঁতে দুই বাঁশের সংযোগ জলমহলে ফেলে রাখা হচ্ছে বিশাল বিশাল আকৃতির চায়না দুয়ারী। প্রতিটি চায়না দুয়ারী ৫০-৬০ হাজার টাকা দরে কিনে এনে অসাধু জেলেরা এ কাজ করছে। চায়না দুয়ারীতে ছোট বড় মাছ, রেণু পোনা, এমনকি মাছের ডিমও আটকা পড়ছে।
সাধারণ জেলেরা জানান, প্রতিটি বেড়জাল ও নৌকা তৈরি করতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সব কিছুই হাওলাদারদের, আমরা শুধু লেবারের মতো মাছ ধরার কাজ করি। তাই প্রতিদিন ভোরে বিক্রীত মাছের একটি ভাগ আমরা জেলেরা নিই এবং বাকি একটি ভাগ নেয় মহাজন বা হাওলাদার। এভাবে চুক্তি করে আমরা এসব পোনা মাছ ধরি।
যমুনা নদীর কালিতলা, মথুরাপাড়া, দেবডাঙ্গা, কর্নিবাড়ী, হাটশেরপুর, চালুয়াবাড়ী, হাসনা পাড়া, কাজলা, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, রহদহ এসব এলাকার বিশাল বিশাল জলমহলে দিন-রাত নিষিদ্ধ জাল দিয়ে চালানো হচ্ছে পোনা মাছ নিধনের এ মহোৎসব।
প্রতিদিন যমুনা নদীর এসব এলাকা থেকে রেণু পোনা ধরে এনে জেলেরা উপজেলার বিভিন্ন ঘাট থেকে বিক্রি করে দেন। তারা ফোনে বিভিন্ন পোনা মাছ সংগ্রহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এসব পোনা বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ চাষিরা খুব চড়া দামে কিনে নিয়ে যায়। সারিয়াকান্দিতে এরকম ১০ থেকে ১৪ জন হাওলাদার এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
বাগবেড়ের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, পোনা মাছ মারার কারনে এখন আর নদীতে মাছ পাওয়াই যায় না। আগে নদী ভরা মাছ ছিল এখন সেগুলো শুধু অতীত মাছের দামের কারনে এখন আর মাছ কিনে খেতে পারি না।
হিন্দুকান্দি গ্রামের শাকিল নামের এক ছাত্র জানান, ছোট বেলায় বাপ চাচাদের সঙ্গে মাছ মারতাম। মাছ হতো প্রচুর। কিন্তু এখন জেলেরা ছোট ছোট মাছ চায়না দুয়ারী জালের মাধ্যমে নিধন করে শেষ করছে। বাঙালি ও যমুনা কোনো নদীতেই আর আগের মতো মাছ পাই না। যারা পোনা মাছ নিধন করে এরা নদীর মাছ শেষ করে ফেলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।
এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা মৎস্য অফিসার গোলাম মোর্শেদ বলেন, নদীতে পানি আসতে শুরু করায় অবৈধ জালগুলোর ব্যবহার বাড়ছে। অবৈধ চায়না জাল বন্ধে বিভিন্ন প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া এর আগে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এখনো আমাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। রেণু পোনা ধরছে এমন কাউকে পেলে মৎস্য আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।