বরগুনার তালতলীতে হস্তান্তরের আগেই ফের নবনির্মিত মুজিব কিলস্না ভবনের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে এ ভবন নির্মাণ করার কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এই ফাটল নিয়ে এর আগেও প্রতিবেদন প্রকাশ হলে হস্তান্তর ও উদ্বোধন বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, বরগুনার তালতলীতে তামাতুটিলায় আপৎকালীন আশ্রয়ণ কেন্দ্রের মুজিব কিলস্না নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মুজিব কিলস্না নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যাদেশ পান পটুয়াখালীর সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সঞ্জয় কুমার কর্মকার। ওই অর্থবছরের ভেতরে নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে তা হয়নি। তবে হস্তান্তরের আগেই গত ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবরে ভবনটি উদ্বোধন হয়েছে এমন সাইন বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন ঠিকাদার। এরপরে গত বছরের আগস্টের দিকে নবনির্মিত মুজিব কিলস্না ভবনের বিভিন্ন অংশের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে ফাটলগুলো স্থানীয়দের নজরে আসে। এনিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হলে ভবন হস্তান্তর ও উদ্বোধন বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে ফাইনাল বিল আটকে দেন ইউএনও। এর পরে গত এক বছরে শুধুমাত্র ফাটলস্থানে সিমেন্টের আস্তর করে রাখা হয়েছে। ফের ওই ভবনে ফাটল দেখে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় এ ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
প্রকল্পে মাটির কাজ, ভবনের স্স্নোপ, ভিমের লিংটেন, ক্যাটল শেডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হলেও তা অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে ভবনে স্স্নোপ, মূল ভিমের লিংটেন ও ক্যাটল শেডে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এদিকে ১৯৯৫ সালে উপজেলার তালতলী, মালিপাড়া ও তুলাতলী গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়েছে তামাতু নামের টিলা। এটাও ভুল করে তারা নাম লিখেছেন তামাকুটিলা। এছাড়াও উদ্বোধনের নাম ফলোকে প্রধানমন্ত্রীর নামও মুছে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রেকসোন বলেন, তালতলী তামাতুটিলায় মুজিব কিলস্না নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, না হলে এভাবে ফাটবে কেন। এই ফাটলের কারণে আমরা আতঙ্কিত। আপদকালীন সময় এখানে আশ্রয় নিতে মানুষ ভয় পাবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম লিটু বলেন, মুজিব কিলস্নার কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নিম্নমানের মালামাল দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। আমি একাধিকার তাদের বলতে গেলে তারা বলেন, উন্নয়ন কাজে বাধা দিতে আসবেন না। এমন কি চাঁদাবাজি মামলা দেওয়ারও হুমকি দেন আমাকে।
এ বিষয় সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সঞ্জয় কুমার কর্মকারের ফুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ওই কিলস্না নির্মাণের কাজ করা আরেক ঠিকাদার রিপন বলেন, ভবনে কোনো ধরনের ফাটল দেখা যায়নি।
মুজিব কিলস্না প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার মো. শামছুদ্দোহা বলেন, গত বছর যে সব স্থানে ফাটল দেখা গেছে সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। এখন যদি কোনো ফাটল দেখা যায় তা সংস্কার না করা পর্যন্ত ঠিকাদারকে ফাইনাল বিল দেওয়া হবে না। সম্পূর্ণ ঠিকঠাক না থাকলে আমরা ভবনটি বুঝেও নেব না।
ভবন নির্মাণ কাজের পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আল মাসুম বলেন, ঠিকাদার ফাইনাল বিলের জন্য আবেদন করেছে। আমরা পরিদর্শন করেই বিল দেব। সেখানে ভবনে যদি কোনো ফাটল বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে তাহলে বিল দেওয়া হবে না।
ইউএনও সিফাত আনোয়ার তুম্পা বলেন, আমরা পরিদর্শন করে দেখব। যদি কোথাও ফাটল থাকে তাহলে ফাইনাল বিল দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে আমরা ভবনটি বুঝে নেব না।