নলছিটিতে আঁধার নামলেই শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎসব

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০

নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি
দিনের বেলায় সুনসান নীরবতা, সন্ধ্যা গড়িয়ে একটু অন্ধকার হলেই শুরু হয় বালু উত্তোলনের বিশাল কর্মযজ্ঞ। গণমাধ্যমকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিতে দিনের আলোর বদলে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে বালুখোকোরা। রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বালু উত্তোলন হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকাও রহস্যজনক। বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙছে নদী, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা ও বিষখালি নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে রাতের আঁধারে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। দুই নদীর বিভিন্ন তীরে রাত হলেই ডজন ডজন ড্রেজার দিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। যার ফলে নদী ভাঙন তীব্র হচ্ছে। গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি আর মানুষের বসতবাড়ি। নদীর তীরবর্তী মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন। জানা গেছে, নলছিটি পৌর এলাকার অনুরাগ সংলগ্ন সুগন্ধা নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন চলছে। রাত ১০টা থেকে ভোর রাত ৪টা পর্যন্ত চলে এই বালু উত্তোলন। ফলে এই এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র হচ্ছে। অন্যদিকে উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের চরইসলামাবাদ সংলগ্ন বিষখালি নদী থেকে সন্ধ্যা হলেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলে। আবার রাত পোহাবার আগেই তারা চলে যায়। এ যেন 'মরার উপর ফোঁড়ার ঘা।' এমনিতেই এসব এলাকায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করে। তার ওপর অবাধে বালু কাটার ফলে ভাঙন আরও তীব্র হয়। রানাপাশার চরইসলামাবাদ এলাকায়ই তৈরি করা হয়েছে মুজিব কেলস্না, বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়তে পারে সরকারি এই স্থাপনা। স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম মন্টু জানান, দীর্ঘদিন ধরেই পাশের উপজেলার একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় একটি চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই সাত থেকে আটটি ড্রেজার দিয়ে দেদারসে বালু উত্তোলন চলে। তাই এখন বিষখালি নদী সংলগ্ন চর এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন। বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দুই তীরে ভাঙনের তীব্রতা আঙ্ককাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, এর প্রতিকার চেয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল স্থানীয়দের নিয়ে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ নলছিটি ইউএনও বরাবর দাখিল করেছিলাম। তবে লিখিত অভিযোগ করার পরও বালু উত্তোলন থামেনি। পৌর এলাকার বাসিন্দা ইশরাক মাহমুদ জানান, 'আমাদের অনুরাগ গ্রামের শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নদীতে হারিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। আমরাও একাধিকবার বাড়ি হারিয়ে নতুন বাড়ি তৈরি করেছি। এখন নদী থেকে আমাদের ঘরের দূরত্ব সামান্য কয়েক মিটার। বিগত সময় নদী ভাঙনের তীব্রতা কম হলেও বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। রাত হলেই এক ডজন ড্রেজার নদীর দুই পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে। আবার রাত পোহাবার আগেই সটকে পরে। এ নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও এতে তারা কর্ণপাত করে না। আমাদের গ্রামে এ রকম শতশত ভুক্তভোগী আছে, যারা একাধিকবার নদীতে তাদের বাড়িঘর বিলীন হতে দেখেছেন। আবার অনেকে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে সরকারি আশ্রয় প্রকল্পের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে নদী থেকে ড্রেজারে দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।' এ ব্যাপারে নলছিটি ইউএনও নজরুল ইসলাম বলেন, 'নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কোনো সুযোগ নেই। এ রকম যদি হয়ে থাকে, তাহলে আমরা শিগগিরই বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেব।'