দ্বীপ জেলা ভোলায় হঠাৎ করে দেখা মিলছে বিষধর সাপ রাসেল'স ভাইপারের। ছড়িয়ে পড়ছে একের পর এক উপজেলায়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপজেলার নদীর তীরে, বসত-বাড়ি, ফসলের মাঠ ও রাস্তা থেকে উদ্ধার হচ্ছে এই ভয়ংকর সাপটি। এতে করে আতঙ্কিত ভোলার নদীর পাড়ে ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ।
ভোলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, হঠাৎ করেই ক্লিনিং মেশিন নামে খ্যাত রাসেল'স ভাইপারের দেখা মিলছে। একে একে জেলার সাত উপজেলা থেকেই ধরা পড়ছে এই রাসেল'স ভাইপার।
এরমধ্যে কারো বাড়ি, রান্নার ঘর, ফসলি জমি, সড়ক, নদীর তীরে সিসি বস্নক বাঁধ ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ছোট ও বড় মিলে প্রায় ২০টির মতো রাসেল'স ভাইপার সাপ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এরমধ্যে বেশিরভাগ সাপকে পিটিয়ে হত্যা করে। আর ১-২টি জীবিত উদ্ধার করে বন বিভাগের মাধ্যমে অবমুক্ত করা হয়।
এদিকে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়ার পাড়ে ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে বসবাস করা মানুষের মধ্যে বিষধর সাপ রাসেল'স ভাইপারের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছির মাঝি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজ মাঝি জানান, তারা মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। আর অনেক বছর ধরে তারা নাছির মাঝি মৎস্য ঘাট সংলগ্ন মেঘনার পাড়ের সিসি বস্নক বাঁধে বসে জাল মেরামত করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত রোববার বিকালে সিসি বস্নক বাঁধের পাশে একটি বিষধর সাপ দেখতে পান। পরে স্থানীয়রা বলেন এটি ভয়ংকর বিষধর সাপ রাসেল'স ভাইপার। এরপর স্থানীয়রা এটিকে পিটিয়ে হত্যা করে।
ইলিশা ইউনিয়নের জংশন এলাকার ব্যবসায়ী নাছির মাঝি মৎস্য ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী মো. রাসেদ জানান, তাদের এলাকা থেকে কয়েকটি রাসেল'স ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে। শুনেছেন এটি একটি ভয়ংকর বিষধর সাপ। এটি কাউকে কামড় দিলে সে মারা যায়। তাই যারা নদীর পাড়ে ব্যবসা করেন তারা রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে চিন্তিত।
দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কবির শিকদার জানান, তারা বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নের বসবাস করছেন। সেখানেও কয়েক দিন আগে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে। যার কারণে চরাঞ্চলের বসবাস করা মানুষ খুবই দুচিন্তায় রয়েছেন।
তারা আরও জানান, 'সাপের ভ্যাকসিন শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ও সদর হাসপাতালে আছে। আর আমাদের এখান থেকে হাসপাতালে যেতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই যদি আমাদের মদনপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকে এর ভ্যাকসিন থাকতো তাহলে কাউকে সাপে কামড় দিলে সহজে ভ্যাকসিন দিতে পারত।'
ভোলার উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে রাসেলস ভাইপারের বাসস্থান জোয়ারের পানিতে পস্নাবিত হওয়ায় এগুলো এখন বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে। আর রাসেল'স ভাইপার কাউকে সহজে কামড় দেয় না। মানুষকে সাপ হত্যা না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শীত মৌসুমে এগুলো আবারও তার বাসস্থানে ফিরে যাবে। ভোলা সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান জানান, বর্তমানের সদর হাসপাতালসহ সবগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সগুলোতে ভ্যাকসিন মজুত রয়েছে। সাপে কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আসার অনুরোধ করেন। এছাড়াও তিনি সবাইকে সাবধানে থাকার পাশাপাশি বাড়ি-ঘর ও আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখারও পরামর্শ দেন।