'মাছে ভাতে বাঙালি' প্রবাদটি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। শত বছরের পুরনো এই প্রবাদটি শুধু কথার কথাই না। এটা বাঙলির জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। প্রতিদিনই খাবারের তালিকায় মাছ না থাকলে যেন পেট ভরে খাওয়া হয় না। শুধু মাছ হলেই চলে না চাই পছন্দসই মাছ। আর সেই পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তবে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে অর্ধশত দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
দিনদিন গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজারে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার শুরুতেই কাশিয়ানী উপজেলার বিভিন্ন নদী, খাল-বিলে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, সুতিজাল, ভেসাল, বেহুন্দী জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকারিরা বেপরোয়াভাবে মাছ শিকার করছে। বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মাছ ডিম ছাড়ার আগেই শিকারিদের জলে আটক হচ্ছে। ফলে দেশীয় মাছ তাদের বংশ বিস্তার করতে পারছে না। দিন দিন দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। দ্রম্নতগতিতে কাশিয়ানী উপজেলা এলাকা দেশীয় মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে।
এক সময়ের এই এলাকায় বোয়াল, শোল, গজার, কৈ, শিং, মাগুর, স্বরপুটি,ক্যালকে টাটকেনি, বাচা, গাইড়ো, বাঁশপাতা, মাগুর, রুই, কাতল, মৃগেল, টেংরা, পুটি, রয়না, গুইতে, বাইম, টাকি, খলসে, আইড়, চিংড়ি, রিটা, বেলে, পাবদা, কালিবাউস, রঙিন বেতাগা, মলা ঢেলাসহ প্রায় অর্ধশত প্রকার জনপ্রিয় দেশীয় মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তর পথে। এর মধ্যে বাঁশপাতা, স্বরপুটি, বোয়াল, রিটা, পাবদা, রয়না, আইড় দেখা পাওয়াই সৌভাগের ব্যাপার।
এলাকাবাসী জানান, বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে অসাধু লোকজন সরকার নিষিদ্ধ ইলেকট্রিক শর্ট, কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, ভেসাল, বেহুন্দী জাল, সুতিজালের অবাধ ব্যবহারে মাছের প্রজনন শেষ করে দেয় এবং এসব জাল দিয়ে ছোট ছোট মাছ ও মাছের ডিমসহ শিকার করে নেয়। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পুকুর মালিকরা তাদের পুকুর একাধিক বার সেচ দিয়ে মাছ ধরে। আবার এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন সরকারি খালগুলো ক্ষমতা খাটিয়ে বিক্রি করাসহ অবৈধ্যভাবে সেচ দিয়ে মাছ ধরে। যে কারণে মাছের বংশ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
দেশীয় মাছ রক্ষা ও অবৈধ্য জাল ব্যবহার বন্ধে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রাসেদুজ্জামান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়েনের গ্রাম পুলিশকে (চৌকিদার) একত্রিত করে সমাবেশের মাধ্যমে অবৈধ্য জাল ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে রাজপাট ও পারুলিয়া ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশের অভিযান চোখে পড়ার মতো। অবৈধ্য জাল উচ্ছেদ অভিযান করার অপরাধে রাজপাট ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের ছেলে জাল মালিকদের মারধরের শিকার হয়।
উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজীব রায় এ বছরে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে দুই হাজারের বেশি ম্যাজিক জাল আটক ও ধ্বংস করেন। এসব পদক্ষেপ নিলেও কোনো প্রকার লাভ হচ্ছে না। দ্বিগুণ হারে বেড়ে চলছে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার।
উপজেলা মৎস্য অফিসার রাজীব রায় জানান, দেশীয় মাছ রক্ষার জন্য ইউএনও মু. রাসেদুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রায়ই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।