দুই বছরেও শেষ হয়নি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ
পূর্বধলায় সুপেয় পানি বঞ্চিত ১৮০ পরিবার
প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
নেত্রকোনার পূর্বধলায় কার্যাদেশ পাওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কমিউনিটি ভিত্তিক পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ আজও সম্পন্ন হয়নি। এতে উপজেলার ১৮টি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সাইট মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে একদিকে যেমন সরকারের পরীক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার ১৮০টি পরিবার। এ ছাড়া প্রকল্পটি যথাসময় বাস্তবায়ন না হওয়ার সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এমনটি হচ্ছে বলে দাবি করছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের লোকজন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পূর্বধলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে- 'সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প'র আওতায় সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য পাইলটিং প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্প শুরু হয় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে, শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৫ সালের জুন মাসে। এই প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৯টিতে মোট ১৮টি সাবমারসিবল পানির পাম্প স্থাপনের অনুমোদন দেয় উপজেলা ওয়াটসন কমিটি। এতে কোনো কোনো ইউনিয়নে তিনটি করে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও উপজেলার বিশকাকুনী ও বৈরাটি ইউনিয়ন এই প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে। প্রকল্পের এক একটি সাইট থেকে সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে ১০টি করে মোট ১৮০টি পরিবারের মধ্যে পাইপের মাধ্যমে পানি পাওয়ার কথা। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৮ টাকা। পূর্বধলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কার্যাদেশ পায় 'গেস্নাবাল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সাপস্নায়্যার্স' নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রম্নয়ারি কার্যাদেশ পেয়ে একই বছরের ১৭ জুলাই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ দুই বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের কাজ আজও শেষ হয়নি।
উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের গিরিয়াসা গ্রামের সাইট দেখতে গেলে দেখা যায় সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে আশপাশের ১০টি পরিবারের মধ্যে পানি সরবরাহের জন্য কয়েল পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচ দিয়ে লাইন টানা হয়েছে। তবে স্ট্রাকচার তৈরি ও পানির ট্যাংকি স্থাপন না করায় পানি সরবরাহ পাচ্ছে না পরিবারগুলো। এ সময় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্য শাহজাহান, নূরজাহান, ফিরোজা বেগম জানান, 'প্রায় দুই বছর ধরে কল পুঁতে ফেলে রাখলেও আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। ফলে নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। উপজেলার ১৮ সাইটের প্রত্যেকটিতে এমন অবস্থা বিরাজমান।'
উপজেলার গোহলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। বিষয়টি উপজেলা সমম্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার জানানো হয়েছে।
বিশকাকুনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম আল আমিন জানান, ১১টি ইউনিয়নে ১৮টি পাম্প দেওয়া হলেও বিশকাকুনী ও বৈরাটি ইউনিয়নে কোনো পাম্প না দেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক।
উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জোবায়ের আল মাহমুদ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজ শেষ হচ্ছে না। দ্রম্নত কাজ শেষ করতে মৌখিকভাবে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও কোনো কাজ না হওয়ায় ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে লিখিত চিঠির মাধ্যমে তাকে দ্রম্নত কাজ শেষ করার তাগিদ হয়েছে।
মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ বাস্তবায়ন করছেন সৌরভ ইসলাম। মুঠোফোনে এই প্রতিনিধিকে তিনি জানান, মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গেস্নাবাল কন্সট্রাকশন ঠিকমতো টাকা না দেওয়ায় তিনি কাজ শুরু করতে পারছেন না। এ পর্যন্ত ৫৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যপারে গেস্নাবাল কন্সট্রাকশন অ্যান্ড সাপস্নায়ারের স্বত্ব্বাধিকারী এমদাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'আমার বাবা মারা যাওয়ায় এখন বিস্তারিত কথা বলতে পারব না। তবে শিগগিরই কাজ শেষ করা হবে।'
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খবিরুল আহসান জানান, ওই প্রকল্পের কাজটি দ্রম্নত শেষ করার জন্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। দ্রম্নত কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।