শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
বিপাকে কৃষক

কক্সবাজারে বীজের মূল্য লাগামহীন

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
কক্সবাজারে বীজের মূল্য লাগামহীন

কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও হাটবাজারসমূহে প্রাইভেট কোম্পানির সরবরাহকৃত বীজ ধানের দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারিভাবে মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে না দেওয়ায় কৃষকের কাছ থেকে ইচ্ছা মতো টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ডক্টর বিমল কুমার প্রামাণিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বীজের গুণগতমান নির্ণয় করার জন্য বীজ প্রত্যয়ন পরীক্ষাগার রয়েছে। বীজের মূল্য নির্ধারণ করার কথা বিএসটিআই'র। তবে বাজারে কৃষকের কাছে বীজের মূল্য অতিরিক্ত নিলে ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযানসহ পদক্ষেপ নিতে পারবে।

জেলা-উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় প্রাইভেট কোম্পানিগুলো বীজের বাজার মূল্য লাগামহীন করে তুলেছে- এমন অভিযোগ নাগরিক সমাজের। অতিরিক্ত মূল্যে বীজ ধান বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। বলতে গেলে দেখার কেউ নেই।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, চলতি আমন মৌসুম জেলাজুড়ে বীজতলা তৈরি ও বীজ বপনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। কৃষকরা কীটনাশক ও সারের দোকান থেকে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির সরবরাহকৃত নানা ব্র্যান্ডের বীজ ক্রয় করছেন। এই সুযোগে কিছু অসাধু কোম্পানি হাতিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছামতো দাম। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত মূল্য ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না- এমন অভিযোগ সচেতন কৃষকদের।

উখিয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুস্তাক আহমদ জানান, চলতি আমন মৌসুমে ব্রি - ৫১, ব্রি ৫২, ব্রি ১০, ব্রি ১১, ব্রি ২২, ব্রি ৩০, ব্রি ৩৩, ব্রি ২৩, ব্রি ৩৯, ব্রি ৪৬, ব্রি ৪৯, হরিধান, পায়জামসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ হয়ে থাকে। ভালো বীজ দিয়ে আদর্শ বীজতলা তৈরি করে উৎপাদিত চারা রোপণের মাধ্যমে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চকরিয়ার হারবাং এলাকার অ্যাডভান্সড মাল্টি ফার্ম লিমিটেড স্বর্ণালী ব্রান্ড, কক্সবাজার বৈদ্যঘোনার পথিকৃত এগ্রো ফার্মের প্রিয়ন্তী ব্রান্ডের বীজ, রামুর মুক্তা সিড কোম্পানির মুক্তা বীজ, চকরিয়ার জননী বীজ, রামু কম্বাবাইন্ড বীজ বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবিলন সিড, ফলোসিটি সিড, সুপার সিড ও মেঘনা সিডের হরেক রকম জাতের বীজের প্যাকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে। কোট বাজারের দোকানদাররা জানান, স্বর্ণালী ব্র্যান্ডের মানঘোষিত (৫ কেজি) বীজ ধান প্রতি প্যাকেট ৫৮০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য কোম্পানির প্রতি প্যাকেট বীজ ধান ৪৭০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা বিক্রি করা হয়। উখিয়া সদর, স্টেশন, মরিচ্যা, রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, জোয়ারিয়ানালা চকরিয়ার খুটাখালীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে স্বর্ণালী ব্রান্ডের ৫ কেজি বীজ প্যাকেট ৫৮০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় কৃষকদের নিতে হচ্ছে। যা অন্য কোম্পানির মূল্যের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি। ইচ্ছামতো অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

চকরিয়ার অ্যাডভান্সড মাল্টি ফার্ম লিমিটেডের (স্বর্ণালী ব্রান্ড) মালিক আছহাব উদ্দিন বীজের মূল্য সর্বোচ্চ নিচ্ছেন স্বীকার করে বলেন, গুণগতমান বজায় রাখতে গিয়ে খরচ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত দাম নিতে হচ্ছে। মূল্য নির্ধারণ কে করে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'উৎপাদন খরচের ওপর আমরা নিজেরাই মূল্য নির্ধারণ করি।'

জেলা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির (অতিরিক্ত দায়িত্বে) জেলা কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ আলী জিন্নাত জানান, বেসরকারি কোম্পানিসমূহ উৎপাদিত বীজের মূল্য অতিরিক্ত হাতিয়ে নিলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অভিযান পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে জেলা ও উপজেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে