মানুষের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে প্রধান বিচারপতি

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ার আদালত প্রাঙ্গণে 'ন্যায়কুঞ্জ' উদ্বোধন শেষে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান -যাযাদি
বগুড়ার আদালত প্রাঙ্গণে 'ন্যায়কুঞ্জ' উদ্বোধন করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, দূর-দূরান্ত থেকে আগত বিচার প্রার্থীদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে 'ন্যায়কুঞ্জ' নামের এই বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে তিনি এই 'ন্যায়কুঞ্জ' উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'এই ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার পেছনে একটি ঘটনা আছে। পূর্ববর্তী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, বিচারপ্রার্থী মানুষ যখন আদালতে আসেন, সেখানে তাদের বিশ্রাম নেওয়ার কোনো জায়গা থাকে না। তখন প্রধানমন্ত্রী সহানুভূতিশীল হয়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের ৬৪ জেলায় ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তারই অংশ বগুড়ার এই ন্যায়কুঞ্জ। প্রায় এক বছর আগে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, 'সারাদেশে দুই ধরনের ন্যায়কুঞ্জ আছে ৮০০ বর্গফুট ও এক হাজার বর্গফুট আয়তনের। বগুড়া জেলা বড় বিধায় এখানে এক হাজার বর্গফুটের ন্যায়কুঞ্জ নির্মিত হয়েছে। যেসব বিচারপ্রার্থী মানুষ বগুড়ার আদালতে আসেন তারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে এখানে বসতে পারেন, বিশ্রাম ও পানি পান করার সুযোগ পান- এই উদ্দেশ্যেই ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।' প্রধান বিচারপতি বলেন, 'মানুষের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাদের জন্য ন্যায় বিচার, সেই বিচারপ্রার্থী মানুষের সুখ-দুঃখের কথা বিচার বিভাগকে যেমন চিন্তা করতে হয়; একইসঙ্গে রাষ্ট্র অবশ্যই তা চিন্তা করে। আর রাষ্ট্র চিন্তা করে বলেই বিচার বিভাগের প্রস্তাবে সরকার সাড়া দেওয়ায় ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'আইনের শাসনের অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিকের মৌলিক এবং সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধান এই অধিকারকে নিশ্চিত করেছে। যারা বিচারপ্রার্থী মানুষ এখানে আসবেন, সাক্ষী দিতে যারা আসবেন তারা এখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এমনকি জামিনে থাকা আসামিরাও এখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এতে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। একসময় আমরা দেখতে পাব বিচার কাজের মন্থরগতি কমে গেছে, বিচার গতি পেয়েছে এবং বিচারকাজ গতিময়তার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই আমরা বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিতে চাই এবং এই ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানাই।' ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধনের পর প্রধান বিচারপতি বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সভাকক্ষে জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ একেএম মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বিশেষ জজ আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুলস্নাহ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২-এর বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর, প্রশাসনিক ট্রাইবু্যনালের বিচারক শরনিম আকতার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-১-এর বিচারক আশিকুল খবির, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামন ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজরা। এছাড়া বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন আদালতের বিচারক, বগুড়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, অ্যাডভোকেটস বার সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উলেস্নখ্য, এক হাজার বর্গফুটের ন্যায়কুঞ্জে বিচার প্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য একটি ওয়েটিং রুমে বসার জন্য ৭২টি সিট রয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক দুগ্ধপোষ্য শিশু ও মায়ের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার রয়েছে। নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা ওয়াশরুমসহ জরুরি প্রয়োজনে খাবার কেনার জন্য আলাদা ফুড কর্নারেরও ব্যবস্থা রয়েছে এই ন্যায়কুঞ্জে।