আজকের যায়যায়দিন

বরগুনার তালতলীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কচুরিপানায় ভরে গেছে 'কচুপাত্রা' খাল। এতে ৫০ বছরের দড়িটানা খেয়া চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বাদুরগাছা এলাকার তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর স্কুলে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার প্রায় ৭-৮ গ্রামের মানুষ। দ্রম্নত কচুরিপানা অপসারণ করে ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বাদুরগাছা এলাকার বেতমোর খেয়াঘাটে মানববন্ধন করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসী।

জানা যায়, উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নে কচুপাত্রা খালের বাদুরগাছা-বেতমোর এলাকায় গত ৫০ বছর যাবত দড়িটানা খেয়া রয়েছে। শারিকখালী ইউনিয়নের ৭-৮টি গ্রাম থেকে তালতলী উপজেলা প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব এবং ওইসব গ্রাম থেকে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলা মাত্র ৫ কিলোমিটার। কলাপাড়া উপজেলা কাছাকাছি হওয়ায় ওই এলাকার মানুষ কচুপাত্রা খালের বেতমোর দড়িটানা খেয়া পাড়ি দিয়ে দৈনন্দিন কাজ করতে যান কলাপাড়া শহরে। এ ছাড়াও ওই এলাকায় কোনো স্কুল-কলেজ না থাকায় খালের ওপারের স্কুল-কলেজে এপারের প্রায় তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করতে যান। চলতি বছরের মে মাসের ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ওই খাল কচুরিপানায় ভরে গেলে খেয়া চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যা অপসারণ করাও যাচ্ছে না। খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন এই এলাকার মানুষ।

বর্তমানে কলাপাড়া শহড়ে যেতে হলে প্রতিদিন তাদের প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার পথ অটোরিকশা বা মোটর সাইকেল করে যেতে হয়। গুনতে হচ্ছে দৈনিক ১৫০-২০০ টাকা ভাড়া। এদিকে খালের ওপারেই স্কুল-কলেজ থাকায় তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে ও প্রায় ৭-৮ গ্রামের দিনমজুর মানুষের দৈনন্দিন কাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে। বাধ্য হয়ে ব্রিজ চেয়ে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী।

সরেজমিন নিয়ে দেখা যায়, এক মাস ওই খালে কচুরিপানা থাকায় খেয়া বন্ধ রয়েছে। খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় অর্থ সংকটে পড়েছেন ঘাটের দুই পাশের দিনমজুররা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক মানুষ। স্কুলে যেতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা।

স্থানীয়রা জানান, এই ঘাট দিয়ে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলায় শারিকখালী ইউনিয়নসহ আশপাশের ১০-১২ গ্রামের মানুষ এই খাল পার হয়ে থাকেন। প্রতিদিন প্রায় তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী, পাঁচশতাধিক শ্রমিকসহ হাজার হাজার ব্যবসায়ী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ খাল পার হয়ে থাকেন। খেয়া বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী, শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের বাজার বা কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার পথ পার হয়ে। এখন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।

পঞ্চম শ্রেণির মানসুরা নামের এক স্কুলছাত্রী বলে, খেয়া বন্ধ থাকায় গত এক মাস পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারছি না। এখানে একটি ব্রিজ থাকলে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের খেয়া পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, যাতে এখানে একটা ব্রিজ দেয়।

স্থানীয় মহিউদ্দিন নামের এক দিনমজুর জানান, খেয়া বন্ধ থাকায় কলাপাড়ার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে। স্কুলে যেতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা। এই খালে দ্রম্নত একটি ব্রিজ দেওয়া হলে দুর্ভোগ কমবে এখানকার মানুষের।

শারিকখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক খান বলেন, খালে কচুরিপানা থাকার কারণে খোয়া নৌকা বন্ধ রয়েছে। খালটি অনেক বড় থাকায় এখানে বাঁশের সাকো দেওয়া সম্ভব না। এই দড়িটানা খেয়া পার হতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকি স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্রী মারাও গেছে। তাই আমি সংশ্লিষ্ট কতৃৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি, যাতে এই খালে একটি ব্রিজ দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, আপাতত কচুরিপানা অপসারণ করে খেয়া চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি। পরবর্তীতে ব্রিজের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।