মৌলভীবাজারের ওপর দিয়ে বয়ে চলা কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয়রা ত্রাণের পরিবর্তে স্থায়ী সমাধান দাবি করেছেন। এদিকে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনা নদীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানি ও ভাঙছে জনপদ। আতঙ্কে দিন পার করছেন স্থানীয়রা। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার জানিয়েছেন, মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীতে পানি ১ থেকে ২ সে.মি. উঠানামা করে এখনো বিপৎসীমা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুশিয়ারা নদীর শেরপুর সেতু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮.৫৫ সে.মি. এসে দাঁড়িয়েছে। এই নদীতে পানির বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ৮. ৫৫ সে.মি.। এদিকে নদীতে পানি অল্প করে কমে যাওয়া ও ভারতের ঢলে আবার বেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর ও সদর উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ। তারা আশঙ্কা করছেন, ২০০৪ সালের প্রায় আট মাসব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি বন্যা যদি এবারও স্থায়ী হয়, তাহলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় সুরমা-কুশিয়ারা ভরাট হয়ে যাওয়া ও বাঁধ নির্মাণ করে খাল-বিল হাওড়-বাওড়ে পানি প্রবাহিত না হওয়াকে দায়ী করছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে কুশিয়ারায় গেলে দেখা যায়, ঘন-কালো আকাশ থেকে আবারও আঝোরে বৃষ্টি নেমেছে। টানা বৃষ্টিতে খেটে খাওয়া ও মধ্যবিত্ত মানুষ পলকে পলকে তাকিয়ে রয়েছেন জলমগ্ন উঠান ও দূরের মেঘলা আকাশে। পাশের ওয়াপদা সড়কে কেউ যেতে চাইলে নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলাই তাদের প্রধান বাহন। যাদের বাহন নেই, তারা বাড়ি থেকে কোমরসম পানি ডিঙিয়ে পাকা সড়কে গিয়ে উঠছেন। নদী পাড়ে বসবাসকারী জলমগ্ন মানুষের শৌচাগার ও নলকূপ তলিয়ে গেছে। প্রাকৃতিক কাজ করতে তারা খড়কোটো ও বাঁশ দিয়ে জলের ওপর ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার বানিয়েছেন।
নদী পাড়ের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের শামিম আহমদ বলেন, 'কেবল ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করে কিছুদিন খেয়ে চললে আমাদের বন্যার্তদের স্থায়ী সমাধান হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য ভরাট হয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদী অচিরেই খনন করতে হবে। নদীর দুই পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করে তলিয়ে যাওয়া এলাকায় উত্তোলন করা মাটি ফেলে ভরাট করলে ওই এলাকার বন্যাক্রান্তরা মুক্তি পাবে।'
স্থানীয় উত্তরভাগ ইউপি সদস্য মাসুক মিয়া ও ওলিউর রহমান বলেন, 'কুশিয়ারা নদী পাড়ের প্রাণের দাবি নদী খনন করা। আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিলস্নুর রহমানের কাছে নদী খননের দাবি তুলেছি। তিনি আমাদের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে নদী খননসহ পাড়ে বসতিতে মাটি ভরাটের আশ্বাস দিয়েছেন।'
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, 'কুশিয়ারায় বন্যা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে আমরা একটি সমীক্ষা চালাচ্ছি। সমীক্ষার পর নদী খননের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনা নদীর অব্যাহত পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙন বেড়েই চলেছে। গত কয়েকদিন ধরে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা অধু্যষিত নিম্নাঞ্চলে বন্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ভাঙন শুরু হয়েছে উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়নের আরকান্দি এলাকায়। গত কয়েক দিনের ভাঙনে ফসলি জমিসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বসতবাড়ি। গৃহহারা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে সেখানে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, জুন মাসের শুরুতে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করে, ৩ জুন থেকে অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়লেও এক সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধি অপরিবর্তিত রয়েছে। এরপর ১৮ জুন থেকে আবারও বাড়ছে যমুনার পানি। এদিকে জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়নের যমুনা অধু্যষিত এলাকায় কয়েক বছর ধরেই ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত অসংখ্য মানুষ। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জালালপুর ও এর আশপাশের এলাকায় ভাঙনও বেড়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর তীরবর্তী এলাকায় কাজের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করায় দেখা দিয়েছে এই নদী ভাঙন। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের গাফিলতিকেই দূষছেন স্থানীয়রা। এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি ভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহির উদ্দিন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এবার বর্ষার আগে থেকেই ভাঙছে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিনে বেশ কিছু ফসলি জমি এবং বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙন থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজি সুলতান মাহমুদ জানান, 'গত কয়েকদিনে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কিছু করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন।'
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, জালালপুর এবং খুকনি ইউনিয়নে নদীভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে ঈদের ছুটি থাকায় ভাঙনরোধে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। আপাতত ওই ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও টিউব ফেলা শুরু করা হয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, 'আমরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে কিছু ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে তীর রক্ষা কাজ দ্রম্নত সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়েছি।'