সম্ভাবনার কৃষি
মহম্মদপুরে মধুমতির বিস্তীর্ণ চরে বাদামের বাম্পার ফলন
প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
এস আর এ হান্নান, মহম্মদপুর (মাগুরা)
মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতি নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বাদাম চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে লাভবান হয়েছেন সহস্রাধিক কৃষক। নদী তীরবর্তী এসব কৃষকরা চলতি মৌসুমে ৪৫০ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বাদাম চাষ করেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বাদামের বাম্পার ফলন এবং আশানুরুপ দাম পেয়ে কৃষক খুশি। দেশি বাদামের পাশাপাশি চিনাবাদামও চাষ করেছেন অনেকে। গত বছর উপজেলায় বাদাম চাষ হয়েছিল ৩০৮ বিঘা জমিতে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১২০ বিঘা বেশি জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার মধুমতি নদীর তীরবর্তী বাবুখালী, দীঘা, মহম্মদপুর সদর এবং পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের নদী পাড়ের সহস্রাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল বারী বিনা-৫, ৮ ও ৯ এবং বিনা চিনাবাদাম-৪ জাতের বাদাম চাষ করেন। বাদাম চাষে খুব একটা খরচ নেই। ফলে চরাঞ্চলে বাদাম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে চাষির সংখ্যা। এরই মধ্যে নতুন বাদাম তুলতে শুরু করেছেন কৃষকরা। প্রতিদিনিই বাদাম তোলার এই ব্যাস্ততা বাড়তে থাকবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নে সব থেকে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে। উপজেলায় ৪৫০ বিঘা জমির মধ্যে ৭০ শতাংশ বাদাম চাষ হয়েছে ওই ইউনিয়নে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে ৫০ জন কৃষককে ৫০ বিঘা জমিতে চাষের জন্য বাদাম বীজ প্রদান করে। অন্যরা নিজেদের মতো করে বাদাম আবাদ করেন।
উপজেলার মধুমতি নদীর বিস্তীর্ণ চরে বাদাম আবাদ করে চরাঞ্চলের সহস্রাধিক কৃষক তাদের পরিবারের অভাব-অনাটন দূর করেছেন অনেকটা। নদী ভাঙনের শিকার এসব মানুষ অভাব-হতাশাকে পেছনে ফেলে নতুন করে ঘর তুলেছেন; নতুনভাবে অবতীর্ণ হয়েছেন জীবন সংগ্রামে। সংগ্রামী কৃষকরা দারিদ্র্যতা জয়ে অনেকটা সফলও হয়েছেন। নদী তীরের মানুষ এ বছর বাদাম চাষ করে আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাজারে নতুন বাদাম উঠতে শুরু করেছে। মানভেদে প্রতিমণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা দরে। ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
জানা যায়, উপজেলার চরসেলামতপুর, হরিণাডাঙ্গা, রায়পুর, পালস্না, চরপালস্না, শিরগ্রাম, জাঙ্গালিয়া, ধুপুড়িয়া, রায়পাশা, চরপাচুড়িয়া, আড়মাঝি, চরঝামা, ঝামা, দেউলি ও কালিশংকরপুরসহ মধুমতির চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বাদাম চাষ হয়েছে। নদী পাড়ের মানুষের দুঃখ মধুমতি। আবার আশির্বাদও এই নদী। নদী শুধু নিতেই জানে না; জানে দিতেও। সর্বগ্রাসী মধুমতি যেমন- প্রতিবছর ভেঙে ফেলছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, গিলে খাচ্ছে লোকালয়; সেই মধুমতিই পলি জমিয়ে সেখানে ফসল ফলাতেও সমান ভূমিকা রাখছে। তাইতো প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শেষে নদী পাড়ের মানুষের কাছে মধুমতি পরম আশির্বাদ হয়ে জেগে ওঠে। চরাঞ্চলের বালুকাময় জমি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ বছর মধুমতির চরে বাদাম চাষে সহস্রাধিক কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পুঁজি পেলে বাদাম চাষের পরিধি আরও বিস্তৃতি লাভ করবে বলে বাদামচাষিরা জানান। প্রতিবছর বাদাম চাষের মৌসুমে সরকারিভাবে ভালোমানের এবং উচ্চ ফলনশীল বীজ পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার চরসেলামতপুর গ্রামের বাদামচাষি আব্দুল খালেক মোল্যা বলেন, 'বংশপরম্পরায় বাব-দাদার আমল থেকে আমাদের পরিবার বাদাম চাষ করে আসছে। মধুমতি নদীর চরে এ বছর আমি প্রায় তিন বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। ভালো ফলন ও ভালো দাম পেয়ে আমি খুশি।' মহেশপুর গ্রামের আজিজার রহমান, চরপাচুড়িয়া গ্রামের লোকমান হোসেন বলেন, 'এবার বাদাম খুবই ভালো হয়েছে। লাভবান হব বলে আশা করছি।'
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বাবুখালী বস্নক) প্রণব কুমার রায় বলেন, 'চলতি মৌসুমে বাদামের গড় ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি বাদাম উৎপাদন হয়েছে ৮-১০ মণ। ভালো দাম পেয়ে কৃষকও খুশি। বাদাম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই উপজেলার চরাঞ্চলে বাদাম চাষ বাড়ছে।'