প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনেও বিভক্ত রামগতি উপজেলা আ’লীগ
সভাপতি-সম্পাদকের পৃথক কর্মসূচি
প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
ল²ীপুরের রামগতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের অন্যরা কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সেই বিভক্ত রেখেই নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম বর্ণাঢ্য প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ পৃথকভাবে পালন করেছেন তারা।
বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ও পরবর্তী ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে বিভক্ত হয়ে পড়া বিরোধ ঠিকই দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে এসে যেন ফের প্রকাশ্যে এলো। সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ মুরাদ আর সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেন।
এ উপলক্ষে গত রোববার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদের নেতৃত্বে উপজেলা সদর আলেকজান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দলের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে উপজেলা সদর আলেকজান্ডারে বাজারে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় পৌরসভা মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি ছিলেন না। ওই সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম নিজামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন রামগতি পৌর মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইস্কান্দার মির্জা শামীম, উপজেলা সহসভাপতি ড. আশ্রাফ আলী চৌধুরী সারুসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
অন্যদিকে একই দিন বিকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদের নেতৃত্বে উপজেলার সদর আলেকজান্ডার বাজারে র্যালি, শোভাযাত্রা উপজেলা পরিষদের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কেক কেটে আরেকটি কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে আলেকজান্ডার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে সভা শেষ করেন। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী, সহসাধারণ সম্পাদক আবু নাছের, যুবলীগের আহŸায়ক মেজবাহ উদ্দিন হেলালসহ দলের বেশকিছু নেতাকর্মী।
জানা যায়, স¤প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের অন্যদের মধ্যে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এতে দেখা যায় জাতীয় সংসদ নির্বচনে এ আসনে নৌকা প্রতীক পান চৌদ্দ দলীয় জোটের শরিক জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল্যাহ আল মামুন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ, সহসভাপতি ড. আশ্রাফ আলী সারু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ যুবলীগ ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী নৌকার পক্ষে ভোট না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল্যাহর পক্ষ নেন।
অন্যদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ, পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেম নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাহিদ হোসেনসহ দলের কিছু ইউপি চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী ভোট করেন নৌকার পক্ষে। ভোটে বড় ব্যবধানে নৌকাকে হারিয়ে বিজয়ী হন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্যাহ আল মামুন। পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এ বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ সময় সভাপতি প্রকাশ্যে কারও ভোট না করলেও সংসদ সদস্য ভোট করেন সাবেক বিএনপি নেতা বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল পক্ষে সহসাধারণ সম্পাদক আবু নাছের কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সভাপতির অনুসারী যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মী। উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ। তার পক্ষে ভোট করেন মেয়র মেজবাহ উদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেম নিজাম, পৌর সভাপতি সাইদ পারভেজ, বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও দলের বেশকিছু নেতাকর্মী। অন্যদিকে আবদুর রব চৌধুরীর ভাতিজি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বেগম রোকেয়া আজাদ তার পক্ষে ভোট করেন দলের সহ-সভাপতি ড. আশ্রাফ আলী সারু, জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইস্কান্দার মির্জা শামীমসহ দলের বেশকিছু নেতাকর্মী। কিন্তু ভোটে আবদুল ওয়াহেদ ও রোকেয়া আজাদ পরাজিত হলেও এমপি আবদুল্যার সমর্থিত সাবেক বিএনপি নেতা শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল বড় ব্যবধানে জয়ী হন। এতে দলের ভেতর চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসেও পৃথক ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি পালন করায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।