সম্প্রতি ফরিদপুরে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে এই সাপের আনাগোনা। সাপের ভয়ে ক্ষেতে কাজ করতে যাচ্ছেন না শ্রমিকরা। সবার মাঝেই বিরাজ করছে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক। এদিকে এ ধরনের ঘোষণা ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের পরিপন্থি এবং দন্ডনীয় অপরাধ বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
এবার সেই সাপ নিধনে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ।
বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের রাসেল স্কয়ারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি।
সভায় শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, 'ফরিদপুর কোতয়ালী এলাকায় কেউ যদি রাসেল ভাইপার সাপ মারতে পারেন, তাহলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রতিটি সাপ মারার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হবে। যত জন যে কয়টি সাপ মারতে পারবে প্রত্যেকে সাপপ্রতি ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। মানুষের জীবন রক্ষার্থে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।'
সভায় সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ঝর্ণা হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের ওই বক্তব্যের ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। যেকোনো বন্য প্রাণী নিধন আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ বলে উলেস্নখ করে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'রাসেল ভাইপার এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সাল থেকে আবার সাপটির দেখা যাচ্ছে। এ সাপের বংশবৃদ্ধির হার বেশি। একবারে একটি মা সাপ ৬০ থেকে ৭০টি বাচ্চা দেয় এবং প্রায় সব কটি বেঁচে যায়। এ সাপ সাধারণত চর এলাকায় থাকে এবং ব্যাঙ, ইঁদুর খেয়ে বাঁচে।'
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কুদ্দুস ভূঁইয়া আরও বলেন, 'ওই বক্তব্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থি। এ ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ যদি রাসেল ভাইপার ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যায়, তবে এ দায় কে নেবে? বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখুন, সাপের কামড়ে কতজন মারা গেছেন? উলেস্নখযোগ্য কোনো সংখ্যা পাওয়া যাবে না। এর চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অনেক বেশি লোক মারা যায়।'
বিষয়টি ভাইরাল হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'ওই ঘোষণা যখন দেওয়া হয় তখন এসংক্রান্ত আইন সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। তা ছাড়া ওই সভা কোনো পাবলিক জনসভা ছিল না; ছিল জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির ঘরোয়া সমাবেশ। তবে আমরা এর ব্যাখ্যা দিয়ে একটা প্রেস রিলিজ দেব; যাতে বলা হবে রাসেল ভাইপার জীবিত অবস্থায় ধরে বন বিভাগের কাছে সোপর্দ করলে এ পুরস্কার দেওয়া হবে।'