দুর্গম পাহাড়ে রামবুটান ও ড্রাগন চাষে সফলতা

প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
নানা গুনসমৃদ্ধ বিদেশি ফল ড্রাগন ও রামবুটান পরীক্ষামূলক চাষে সাড়া পেয়েছেন এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন নাজমুল হোসেন নামে এক কৃষক। বর্তমানে তার বাগানের প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে লাল, হলুদ, সাদা ও বেগুনি রংয়ের ড্রাগন ফলের পাশাপাশি গাছে ঝুলছে লাল-হলুদ রামবুটান। রোগবালাই কম হওয়ার পাশাপাশি চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় এবং বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বিদেশি এই ফল চাষে এরই মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আশপাশের চাষিরা। নাজমুল হোসেনের ড্রাগন ও রামবুটান বাগানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দেড় বছর আগে ফার্নিচার ব্যবসায়ী নাজমুল পারিবারিক জমিতে তিন হাজার ড্রাগন ও অর্ধশতাধিক রামবুটান চারা রোপণ করেন। সেগুলোর সঠিকভাবে পরিচর্যার পর এবারে প্রতিটা গাছেই ফল ধরেছে। আর ড্রাগনের ক্ষেত দেখতে আশপাশের মানুষও এখন ভিড় করছেন। অনেকেই জানতে চাইছেন, কীভাবে অল্প সময় ফলন আনা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আলী আকবর ও রাজু আহমেদ জানান, 'ড্রাগন ক্ষেতটি খুব সুন্দর ও পরিপাটি। অন্যদিকে বিদেশি ফল রামবুটান পাহাড়ে একেবারেই নতুন। সাহসিকতার পরিচয় দিয়েই নাজমুল এমন উদ্যোগ নিয়েছে। অবশেষে তিনি সফলও হয়েছেন। এবার উনার পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে আমরাও চাষাবাদ শুরু করব।' তারা আরও বলেন, 'প্রতিটি গাছেই ফল ধরেছে। এ ছাড়া ড্রাগন ও রামবুটান ফলের দামও বাজারে বেশ ভালো পাওয়া যায়। এ জন্যই ভাবছি, কীভাবে এটার আবাদ শুরু করব।' বাগান মালিক নাজমুল হোসেন জানান, ইউটিউব দেখে আগ্রহী হয়েই ব্যবসার কাজে ঢাকা গিয়ে শখের বসে তিনি ড্রাগন ও রামবুটান ফলের চারা সংগ্রহ করেন। এরপর পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের চৌরাস্তা এলাকায় তার নিজ জমিতে বেড তৈরি করে ড্রাগন চারা রোপণ করেন এবং রামবুটান চারা লাগান। বেড তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ ও গাছের পরিচর্যায় এ পর্যন্ত তার প্রায় তিন লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। তার বাগানে লাল, হলুদ, সাদা ও বেগুনি চার প্রকারে ড্রাগন ও লাল-হলুদ দুই প্রকারের বামবুটান চারা রোপণ করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছে ড্রাগন ফল ধরেছে এবং রামবুটানের অধিকাংশ গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। পর্যায়ক্রমে ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করছেন তিনি। সৌখিন এই চাষি আরও বলেন, 'ইতোমধ্যে আমার বাগানের ড্রাগন ও রামবুটান ফল বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাজারে মৌসুমি ফল ভরপুর থাকায় প্রতি কেজি ড্রাগন পাইকারি ৩০০-৪০০ এবং রামবুটান এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।' কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ড্রাগনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত, ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিন, ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ রয়েছে। একটি ড্রাগন ফলে ৬০ ক্যালোরি পর্যন্ত শক্তি এবং প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, বিটাক্যারোটিন ও লাইকোপিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে ড্রাগন ফল খুবই কার্যকরী। লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ফল হলেও বর্তমানে আমাদের দেশে বিশেষ করে পার্বত্যাঞ্চলে ড্রাগনের চাষ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সম্পূর্ণ অপরিচিত নতুন একটি ফল রামবুটানও চাষাবাদে স্থান পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে কৃষক ও খামারিদের বিদেশি ফল চাষের ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারলে একদিকে যেমন বিদেশি ফলের আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে, অন্যদিকে ফল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন। এ ছাড়া নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।