ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশে চাকরি হচ্ছে না সানজিদার
প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সানজিদা আক্তার (২৯)। তিন বোন, এক ভাই ও বাবা-মাকে নিয়ে অভাবের সংসার। সানজিদার বাবা মীর হোসেন পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। বর্তমানে রামপুর ইউনিয়নে একটি ভাড়া বাসায় থাকে পরিবারটি। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাকরির আশায় পুলিশ কনস্টেবল পদের জন্য আবেদন করেন সানজিদা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নোয়াখালী জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ৭৮ তরুণ-তরুণীর সঙ্গে সানজিদাও পুলিশ কনস্টেবল পদের সব কয়টি ধাপে উত্তীর্ণ হন। কিন্তু এতটা কাছে এসেও স্বপ্ন পূরণে বাধা পড়ল যখন পুলিশ ভেরিফিকেশনে জানা গেল সানজিদা আক্তার ভূমিহীন।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নির্বাচিত প্রার্থীদের ফুল দিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মিষ্টিমুখ করান। পরিবারের ও সানজিদার মুখে হাসি ফুটে উঠে। পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে সানজিদা আক্তার ভূমিহীন জানার ফলে তার চাকরি পাওয়া নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। নিমিষেই সেই হাসি মিলিয়ে যায়। তবে সানজিদার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন বলেন, 'চাকরির নিয়ম অনুসারে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয়। আমরা তখন জানতে পারলাম সানজিদা আক্তার ভূমিহীন। তবে সে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে। বিষয়টি আমাদের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান স্যার জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেন। জেলা প্রশাসক মহোদয় সানজিদাকে ভূমি দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানায়। সব কিছু ঠিক থাকলে এই মাসের শেষের দিকে মেয়েটি প্রশিক্ষণে যেতে পারবে। মেয়েটির পাশে থাকতে পেরে পুলিশ প্রশাসন আনন্দিত।'
সানজিদা আক্তার জানান, 'আমি অনেক কষ্ট করে এই পর্যন্ত এসেছি। সরকারি মুজিব কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে অনার্সে পড়ছি। আমার চাকরিটা হলে বাবা-মায়ের কষ্ট কমবে। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। ভূমিহীন হওয়াতো আমার অপরাধ না। যোগ্যতা অনুযায়ী সব ধাপের পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি।'
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানায় মেয়েটি মেধাবী, কষ্ট করে টিউশনি করে চাকরি পেয়েছে। ভূমিহীন হওয়ায় চাকরিটা মিলছে না। যাচাই-বাছাই করে আমরা তার আদি নিবাসের পাশের ওয়ার্ডে খাস জমিতে পাঁচ শতক জমির দলিল করে দিয়েছি। আমাদের সমাজ কল্যাণ পরিষদের একটা ফান্ড আছে সেখান থেকে তার জন্য ঘর করে দেওয়া হবে। তার একটি স্থায়ী ঠিকানা হবে। এছাড়া সে চাকরি পাওয়ার অধিকার পাবে।'