শেষ সময়ে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট
ক্রেতার ভিড় থাকলেও বিক্রি কম কুলাউড়ায় পথে পথে পশু বিক্রি
প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। দেশের বিভিন্ন জেলার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে বড় হাটগুলোতে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পরা ভিড়। তবে পশু বিক্রি হচ্ছে কম। ক্রেতারা চাহিদা মতো পশু নিতে পারছে না। এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রতিটি এলাকায় রাস্তার পাশপাশে গড়ে উঠেছে গরুর হাট। তাই এ উপজেলার প্রধান প্রধান হাটবাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় কম দেখা গিয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীতে শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। জেলার ইউনিয়নপর্যায় থেকে শুরু করে জেলা শহরের হাটগুলোতেও এখন ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচে পরা ভিড়। তবে গত কয়েক দিন হাটে বেচা-বিক্রি কম হলেও শনিবার থেকেই মূলত কোরবানি পশুর মূল বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানান হাট সংশ্লিষ্টরা।
পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চলের কোরবানি উপযোগী করে যেসব গবাদি পশু লালন পালন করা হয় তার বড় একটি অংশ গৃহস্ত বাড়িতেই লালন পালন করা হয়। ফলে খামারে লালন পালন করা গরুর থেকে এই গরুর চাহিদা একটু বেশি থাকে। এ কারণে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে অনেকে সরাসরি মালিকের কাছ থেকে গরু ক্রয় করতে দেখা গেছে। তবে শুক্রবার থেকে অধিকাংশ গরুর মালিক তাদের পশুগুলো হাটে তুলতে শুরু করেন।
পটুয়াখালী হেতালিয়া এলাকার খামারি ও পটুয়াখালী সদর উপজেলা ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'এবার আমি আমার খামারে মোট পাঁচটি গরু মোটাতাজাকরণ করেছি। এগুলো সব আমার নিজস্ব খামারের গরু। তবে গরুর খাবারের যে দাম তাতে খরচ অনেক বেশি হয়। এর পরও যেহেতু খামারে উৎপাদিত বাছুর, সে কারণে সেগুলোকেই লালন পালন করে কোরবানিতে বিক্রি উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে বাজারে এখনো পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি। অনেকেই গরুর দাম দর করছেন, যেহেতু এখনো কোরবানির তিন দিন বাকী আছে, শনি-রোববার অধিকাংশ গরু বিক্রি হবে।'
পটুয়াখালী হেতালিয়া বাঁধঘাট পশুর হাটে গরু কিনতে আশা ক্রেতা বাদশা মৃধা জানান, 'কোরবানির কয়েক দিন বাকী থাকায় এখনো বিক্রেতারা গরুর দাম ছাড়ছে না। এ কারণে গরু কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বাজারে বিভিন্ন সাইজের গরু আছে। সমস্যা হচ্ছে দুই তিন দিন আগে গরু কিনলে তা লালন পালন করা এবং রাখা একটা বড় সমস্যা, এই কারণে শেষ দিকে গরু কিনতে হবে।'
এদিকে গত কয়েক মাস থেকেই তিব্র দাবদাহ এবং গরমের কারণে গবাদি পশু নিয়ে কিছুটা বিপাকে পরেন খামারিরা। এমন পরিস্থিতিতে এই আবহাওয়ায় হাঁটে গরুর প্রতি বাড়তি নজর দেয়ার কথা বলছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তবে প্রতিটি হাটেই প্রাণিসম্পদ বিভাগের মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানান তারা।
বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরেও পটুয়াখালী জেলায় উৎপাদিত গরু ছাগল দিয়ে জেলার স্থানীয়দের কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় সরবরাহ করতে পারবেন বলে দাবি জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফলজুল হক সরদার জানান, পটুয়াখালী জেলায় এবার কোরবানির জন্য এক লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ গবাদি প্রাণী লালন পালন করেছেন ছয় হাজার ৯০ জন খামারি। তবে জেলায় জেলায় কোরবানি উপযোগী পশুর চাহিদা রয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ২১০টি। এ ক্ষেত্রে তিন হাজার ৪৬৬টি গবাদি প্রাণী উদ্বৃত্ত রয়েছে, যা দিয়ে অন্য জেলার চাহিদাও মেটানো সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, এ বছর পটুয়াখালী জেলায় মোট ২৭টি পশুর হাটে গবাদি পশু বিক্রি হচ্ছে। হাটগুলোতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের মেডিকেল টিমের পাশপাশি জেলা পুলিশের নির্দিষ্ট টিম কাজ করছে। এসব পুলিশ ক্যাম্পে জাল টাকা শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পশুর বাজার জমে উঠেছে। প্রতিটি বাজারে প্রচুর পশু উঠছে। দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি হচ্ছে কম। বাজারগুলোতে লোকজন বাড়ছে। ক্রেতারা চাহিদা মতো পশু নিতে পারছে না। ফলে অনেকেই হতাশায় ভুগছেন। শেষ দুই দিনের মধ্যেই পশু বিক্রি হতে পারে বলে বাজারের ইজারাদাররা ধারণা করছে।
এদিকে পশুর বাজারকে ঘিরে এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যভাবে পশুর বাজারে যাওয়া আসা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল জোরদার করেছে।
আনোয়ারায় ১৩টি পশুর হাট রয়েছে। এসব বাজারে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। পশু বিক্রেতারা জানান, খাবারের দাম বেশি হওয়ায় গরুর দাম বাড়ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আনোয়ারা তৈলারদ্বীপ সরকার হাট, বটতলী রুস্তম হাট, তেকোটা পালের হাটে প্রচুর পশু বাজারে উঠেছে। বাজারে ব্যাপক লোক দেখা গেলেও তুলনামূলকভাবে বিক্রি কম। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে পশু দেখলেও দামের কারণে নিজেদের মধ্যে হিসাব মিলাতে পারছে না। অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরেও পশু নিতে না পেরে হতাশায় বাড়ি ফিরেছেন।
স্থানীয় অনেকেই জানান, পশুর অতিরিক্ত দাম চাওয়া হচ্ছে। তবে শেষ সময়ে সহনশীল দামে গরু বিক্রি হবে বলে পর্যবেক্ষণ মহল মনে করছেন।
রুস্তম হাটের ইজারাদার ফেরদৌস জানান, লোকজন ভাগে কোরবানি বেশি করছে। অর্থাৎ পশুর দাম বেশি হওয়ায় এককভাবে কোরবানির সংখ্যা কমে গেছে। কয়েকজন মিলে কোরবানি করছে।
আনোয়ারা থানার এসআই জয়নাল জানান, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কোরবানির গরুর হাট যেন গোটা উপজেলাজুড়ে। প্রতিটি এলাকায় রাস্তার পাশপাশে গড়ে উঠেছে গরুর হাট। এদিকে উপজেলার প্রধান প্রধান হাটবাজারগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের টানতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। প্রতিটি গরুর রশিদে বিশাল কমিশনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর পরেও ক্রেতা-বিক্রেতারা বাজার মুখী হচ্ছেন না। এতে লোকসান আতঙ্কে ভুগছেন ইজারাদাররা।
কুলাউড়া উপজেলায় প্রধান প্রধান গরুর হাট পৌরসভা গরু ছাগলের হাট, ব্রাহ্মণবাজার, রবিরবাজার, কটারকোনা, পীরের বাজার এসব বাজার ছাড়াও জেলা প্রশাসকের অনুমতি ক্রমে বেশির ভাগ ইউনিয়নে কোরবানি ঈদকে উপলক্ষ করে অস্থায়ী কোরবানির হাট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এসব বাজারে নেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগ্রহ। ক্রেতারা ছুটছেন মূলত স্থানীয় খামারিদের কাছে।
কোরবানি হাটে তাদের অনাগ্রহের কারণ জানতে গেলে বেশির ভাগ ক্রেতাই জানান, তারা আমদানিকৃত গরু কিনতে চান না। গৃহপালিত কিংবা স্থানীয় খামারে পালিত গরু বেশি দামে হলেও কিনতে চান।
এদিকে কোরবানির হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকায় বাজার ইজারাদাররাও হতাশ। তাদের মতে এমন পরিস্থিতি আগে ছিল না। চলতি বছর বেশির ভাগ ক্রেতাই হাটবাজার বিমুখ। বেশির ভাগ খামারিরা তাদের গরু খামার থেকেই বিক্রি করতে চাইছেন। ফলে বাজারে গরুর সংখ্যা কিংবা বিক্রেতাদের ভিড় কম হওয়ার কথা। কিন্তু এতে গরু আসে কোথা থেকে এগুলো খতিয়ে দেখা উচিত।
সীমান্তের ওপার থেকে আসা চোরাই গরুর কারণে খামারিরা তাদের গরুর সঠিক মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন। খামারি রাসেল আহমদ, রমজান আলী, মানজুরুল হকসহ অনেকে জানান, তাদের প্রত্যেকের খামারে ২০-২৫টি করে গরু রয়েছে। গরুর খাদ্য, ওষুধ ও পরিচর্যার লোকের খরচ মিলিয়ে অনেক খরচ হয়েছে। সেই খরচের তুলনায় দাম পাচ্ছেন না। তবে ভারতীয় চোরাই গরুর কারণে দাম তুলনামূলক কম বলে মনে করছেন তারা। উপজেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট ব্রাহ্মণবাজারের ইজারাদার নুরুল ইসলাম খান বাচ্চু জানান, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে যেকোনো সাইজের গরু, যতটাকা মূল্যেরই হোক না কেন, সেটির রশিদ করতে ক্রেতাকে দিতে হবে মাত্র এক হাজার টাকা। তারপরও কি কারণে ক্রেতারা বাজার বিমুখ বুঝতে ঠিক পারছেন না।