কুড়িগ্রামের রাজারহাটে পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে তালিকাভুক্ত দুঃস্থ অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার অনুপযোগী দুর্গন্ধযুক্ত চাল বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। এ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে টিসিবি, ওএমএস ও ভিজিএফসহ বিভিন্ন সরকারি বিতরণে পচা দুর্গন্ধযুক্ত চাল বিতরণ হয়ে আসছে। এ কারণে টিসিবির ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও অদৃশ্য কারণে তা পার পেয়ে গেছে। ডিলারদের দাবি খাদ্যগুদাম থেকেই এসব চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বেশ কিছু ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, টিসিবির বিতরণী স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, উপকারভোগীদের কাছ থেকে এক ধরনের পাইকার ওই স্থান থেকে চাল ক্রয় করে মিলারদের কাছে বিক্রি করছে। আবার সেই চাল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও গুদামের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে গুদামেই ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ফলে বার বার একই দুর্গন্ধযুক্ত চাল উপকারভোগীদের কাছে যােেচ্ছ বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এ কারণে গত সপ্তাহে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার অপসারণ ও প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয়ের জন্য মানববন্ধন করেন কৃষকরা।
সরেজমিনে জানা যায়, ১১ জুন সকাল থেকে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৪ হাজার ৪৮ জন তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণকৃত নিম্নমানের চাল পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দুঃস্থ অসহায়রা। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা মৌজার আমেনা বেওয়া বলেন, ৫ জন মিলে এক বস্তা করে চাল উত্তোলন করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বস্তা নিয়ে এসে ৫ জন ভাগ-বাটোয়ারা করার সময়ে দেখি লালচে রংয়ের পচা দুর্গন্ধযুক্ত খাওয়ার অনুপযোগী চাল। উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নে লাল, পচা ও নিম্নমানের চাল বিতরণ করা হয়। চাকিরপশার তালুক দাসপাড়া গ্রামের মহেন্দ্রনাথের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী ময়না রানী খাবার অনুপযোগী চাল দেখিয়ে বলেন, 'কেমন করি এগল্যা চাউল খামো, ভাত পাক করল ট্যাঙ্গা (টক) নাগে। একই গ্রামের কুমোদিনী, মাধবী রানীসহ কয়েকজন খাবার অনুপযোগী চাল দেখিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চাকিরপশার তালুক হাজীপাড়া গ্রামের মোমেনা বেগম, আর্জিনা বেগমসহ অনেকেই ভিজিএফর পচা ও নিম্ন মানের খাবার অনুপযোগী চাল পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ বিতরণের সময় ৫ জনে ৫০ কেজি চালের বস্তা উত্তোলন করে বস্তা খুলতেই দুর্গন্ধ ভেসে আসে। চালে পোকাসহ ছাতা ধরা চালের অভিযোগ তোলেন শশীবালা, গিরিবালা, জেলেখা, আয়শা, শেফালী। ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে না বলে খাদ্যগুদামে কীভাবে নিম্নমানের খাবার অনুপযোগী প্রবেশ করে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযান পরিচালনা করা উচিত। চাকিরপশার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, খাদ্যগুদাম থেকে সব চালের বস্তা দেখে নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই মিশালের মধ্যে খারাপ চাল আসছে। একই কথা বলেন, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক। অভিযোগ অস্বীকার করে রাজারহাট খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ বলেন, এ চাল আমার এখান থেকে যায়নি, আমার পিছনে কিছু লোক লেগে আছে তারাই করাচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন জানান।