সৈয়দপুরে ট্রেন-ট্র্যাজেডি দিবস পালিত

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
'৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত ১৩ জুন সৈয়দপুরের ট্রেন-ট্র্যাজেডির নৃশংস গণহত্যা দিবস যথাযথ মর্যাদায় বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, ১ মিনিট নীরবতা পালনসহ আলোচনা সভা প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে স্থ্থানীয় শহীদ পরিবারের সংগঠন প্রজন্ম '৭১, রক্তঝরা-'৭১ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৩ জুন সকাল ১০টায় সৈয়দপুর রেলস্টেশনের পস্ন্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিল এ ট্রেনটি। কয়েক দিন ধরে সৈয়দপুর শহরে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার হচ্ছিল- 'শহরে যেসব হিন্দু-মাড়োয়ারি আটকা পড়ে আছেন, তাদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ জন্য একটা বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনটি সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে ভারতের শিলিগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।' মাইকে ঘোষণা শুনে যুদ্ধে লুটতরাজের হাত থেকে যা কিছু সম্বল বেঁচে গিয়েছিল, তাই গোছাতে শুরু করেন হিন্দু বাঙালি ও মাড়োয়ারিরা। ১৩ জুন সকালে তারা সমবেত হতে থাকেন সৈয়দপুর রেলস্টেশনে। পস্ন্যাটফর্মে দাঁড়ানো এই ট্রেনটিতে গাদাগাদি করে উঠে বসেন সবাই। ৫২ বছর পর এ ঘটনার বর্ণনা দেন সেই ট্রেনে চেপে বসা মাড়োয়ারি পরিবারের বেঁচে যাওয়া কয়েকজন সদস্য। ওইদিন ঠিক সকাল ১০টার দিকে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। চলছিল ধীরে-ধীরে। শহর থেকে বেরিয়ে রেলওয়ে কারখানা পেরিয়েই হঠাৎ থেমে যায় ট্রেন। জায়গাটা স্টেশন থেকে দুই মাইল দূরে। নাম গোলাহাট। ট্রেন থামার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন মাড়োয়ারি পরিবারের সদস্য তপন। বন্ধ জানালা একটু ফাঁক করতেই তিনি শিউরে ওঠেন। বাইরে সারি-সারি পাকিস্তানি হানাদার সেনা। সঙ্গে তাদের দোসর বিহারিরা। সেনা সদস্যদের হাতে রাইফেল। আর বিহারিদের হাতে ধারালো রামদা। থেমে থাকা ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে ঢুকেই পাকিস্তানি সেনারা চিৎকার করে উর্দুতে বলতে থাকে, 'একজন একজন করে নেমে আসো। তোমাদের মারতে এসেছি আমরা। তবে পাকিস্তানের দামি গুলি খরচ করা হবে না। সবাইকে এক কোপে বলি দেওয়া হবে।' সঙ্গে-সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞ। ধারালো রামদা দিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছিল গলা, যেন বলি দেওয়া হচ্ছে। ওই হত্যাযজ্ঞে শিশু, বৃদ্ধ, নারীরাও রেহাই পায়নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সেদিন ওই ট্রেন হত্যাযজ্ঞে ৪৪৮ জনকে একে-একে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে কোনোরকমে আশ্চর্যজনকভাবে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান মাত্র ১০ জন যুবক। তারা ট্রেন থেকে নেমে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে দিনাজপুরে যান। ১৩ জুন, নীলফামারীর কুখ্যাত গোলাহাট গণহত্যা দিবস। যাকে পাকিস্তানি দোসররা নাম দিয়েছিল 'অপারেশন খরচাখাতা' হিসেবে।