আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতি, নারিকেল কোরানিসহ অন্যান্য দেশীয় জাতের লোহার জিনিসপত্র তৈরিতে কামাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রাত-দিন এক করে এসব হাতিয়ার তৈরিতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে-কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুড়ির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে কামারদের কাজের ব্যস্ততা এতই বেড়ে যায় যে, তাদের যেন দম ফেলানোর সময়ই থাকে না। স্থানীয় কর্মকার মো. হেলাল, আল-আমিনসহ অনেকেই জানান, বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কোরবানি ঈদে তাদের আয় রোজগার বেশি হয়। এবার প্রতিটি ধারালো দা বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকা, কোরবানির ছুড়ি ৫০০-৯০০ টাকা, পশুর হাড় কাটার জন্য চাপাতি ৬০০-১০০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর চাকু ২৫০-৩০০ টাকা, নারিকেল কোরানি ৩০০-৪০০ টাকা, মাংস কাটার বঁটি ৪৫০-৮০০ টাকা। তাছাড়া অন্যান্য কৃষি উপকরণ ধানকাটার কাঁচি, লাঙ্গলের ফলাসহ অন্যান্য তৈজসপত্রও ভালো দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
সূত্রমতে, হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক কর্মকার সরাসরি এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের নিখুঁত কাজের সুনামের জন্য পাশের ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নান্দাইল এবং পাকুন্দিয়া এলাকার লোকজনও ছুটে আসেন হোসেনপুরে। কেননা তাদের পেশাগত আচরণও মুগ্ধ করে সবাইকে। শত পরিশ্রমের মধ্যেও হাসিমুখে কথা বলে ক্রেতাদের মন জয় করায় অনেকেই খুশি মনে তাদের কিছু বাড়তি টাকা দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
উপজেলার আড়াইবাড়ীয়া গ্রামের কয়েকজন কর্মকার জানান, এমনিতে সারা বছর কাজকর্ম অনেক কম থাকে। এর মধ্যে কয়দিন পর পর লোহার দাম বেড়ে যায়। এতে তারা বেকায়দায় পড়েন। ভালো চালান থাকলে আগে থেকে লোহা কিনে রাখতে পারলে ভালো লাভ পাওয়া যেত বলেও জানান তারা। তাছাড়া পশু জবাই থেকে শুরু করে মাংস তৈরির কাজে প্রয়োজনীয় ওইসব হাতিয়ারের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। তাই ঈদের পূর্বেই কোরবানির পশু জবাই কাজের হাতিয়ার সংগ্রহে কামারদের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন স্থানীয় কসাই, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।
এ সময় দ্বীপেশ্বর পোস্ট অফিসের মোড়ে কর্মকার প্রদীপ চন্দ্র, হাজিপুর কামার পাড়ার বাসিন্দা বরূন, রামপুর বাজারের সুজিত, ধনকুড়া গ্রামের বিনয়সহ অনেকেই জানান, ঈদে দা, চাপাতি ও ছুড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমাদের কাজের ব্যস্ততা অনেক বেশি। তবে বাজারে আমদানিকৃত হাতিয়ার আসায় তাদের তৈরি হাতিয়ারের চাহিদা বহুগুণে কমে গেছে। ফলে পূর্বপুরুষদের এই পেশা ধরে রাখা দুষ্কর হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, আর তিন দিন পরে ঈদুল আজহা। আগুনে পোড়ানো নরম লোহায় হাতুড়ি পেটানো ঠুংঠাং শব্দে দিন ও রাত সমান ব্যস্ততায় সময় পার করছেন মধুখালীর কামার শিল্পীরা। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বাড়তি রোজগারের আশায় ক্লান্তি ভুলে ব্যস্ত কামারিরা।
লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় দা, চাকু, ছুড়ির দাম এবার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মধুখালী বাজারের কামার শিল্পী রাজকুমার কর্মকার। তিনি জানান- 'এবার ক্রেতাদের ভিড় কম। আমার সহকারী হিসেবে ৪ জন কাজ করছেন। তাদের কেউ ব্যস্ত নতুন দা-বঁটি তৈরিতে, আবার কেউ ব্যস্ত পুরনো দা-বঁটিতে শান দিতে। এ বছর আমি নতুন কাজের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করিনি। অনেক মৌসুমে এসময় অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেই। অনেকে মৌসুমি ব্যবসার জন্য পশুর মাংস কেটে দিয়ে বাড়তি রোজগার করতে নতুন দা-বঁটিও বানাচ্ছেন। তবে প্রতিবারের তুলনায় এ বছর কাজের চাপ কম। ঈদের দিন সারারাত কাজ করতে হয়।'
এদিকে মধুখালী বাজার, শ্রীপুর কামারপাড়া, কামারখালী, মেগচামী, নওপাড়া, বাগাটসহ বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়- কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বঁটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন কামাররা। ঈদের কারণে কামারপট্টির কামারদের এখন কাজ বেশি। পুরনো দুটি চাপাতি, একটি চাকু, একটি বঁটি ও ছুরিতে শান দেওয়ার জন্য নিচ্ছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। অন্য সময় মজুরি ছিল ২০০ টাকা। আর নতুন একটি বঁটি ৫০০ ও কুড়াল ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।