আর মাত্র কয়েকদিন পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদ ঘিরে জমে উঠেছে পশুর হাট। তবে এবার বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। কিন্তু ছোট ও মাঝারি গরুর দামও আকাশছোঁয়া। এদিকে যেখানে সেখানে হাট বসিয়ে হাসিলের নামে টাকা আদায় করার অভিযোগ করছেন কোরবানির পশু বিক্রেতা ও ক্রেতারা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদের শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে এলেও বাঁশখালীর পশুর হাটগুলো এখনো জমে ওঠেনি। গরু বেচাকেনা কম হচ্ছে। যেটুকু কেনাবেচা হচ্ছে, এর মধ্যে ক্রেতাদের নজর বেশি দেশি ছোট ও মাঝারি গরুর দিকে। শেষ মুহূর্তে বেশিরভাগ হাটে ছোট-বড় আর মাঝারি সাইজের গরুতে ভরপুর। এতে দামও অধিক চড়া।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর কোরবানির জন্য বাঁশখালীর প্রায় তিন হাজার খামারি ৬১ হাজার ৮৮৫টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এসব পশুর মধ্যে ৪১ হাজার ৯৪২টি গরু, মহিষ ৫ হাজার ৪৪০টি, ছাগল ১০ হাজার ২৯১টি, ৪ হাজার ২০২টি ভেড়া রয়েছে। কিন্তু চাহিদা রয়েছে ৪৫ হাজার। চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে আরও সাড়ে ১৬ হাজার পশু।
সরেজমিনে বাঁশখালীর রামদাশ মুন্সির হাট, জলদি মিয়ার বাজার অস্থায়ী পশুর হাট, টাইমবাজার ও চাম্বল বাজার কোরবানির পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের আগেই কোরবানির পশুতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে প্রায় হাট। এসব হাটে ছোট-বড় ও মাঝারি আকারের প্রচুর গরু উঠেছে। হাটে গরু উঠলেও দাম চড়া থাকায় শেষ মুহূর্তেও গরু না কিনে ফেরত যাচ্ছেন ক্রেতারা। হাটগুলোতে ছোট আকারের এক একটি গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে এক লাখ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের গরু দেড় থেকে দুই লাখ টাকা, বড় সাইজের গরুর দাম তুলনামূলক কম। সে ক্ষেত্রে ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে বড় গরু বিক্রি হচ্ছে।
সাতকানিয়া থেকে বাঁশখালীর রামদাশ মুন্সির হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনে হাটে বিক্রি করি। ৭টি ছোট ও ৬টি মাঝারি আকারের ষাঁড় গরু নিয়ে এসেছি। ছোট গরু একটি বিক্রি করেছি ১ লাখ ১৮ হাজার টাকায়। হাটে ক্রেতা কম।'
কোরবানির গরু কিনতে আসা আফজাল মিয়া বলেন, 'প্রায় হাটে হাসিলের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। একটা ছোট গরু নিলেও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। দেশটা মগের মুলস্নুক হয়ে গেছে। যেমন গরুর দাম, তেমনি হাসিল। মনে হচ্ছে কোরবানি দেওয়াটা পাপ।'
চানপুর ষষ্ঠি বৈদ্যের হাটে আসা বিক্রেতা মোবারক বলেন, 'বড় সাইজের দুটি ষাঁড় হাটে এনেছি। এর মধ্যে একটি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। অন্য ষাঁড় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছি। বেপারীরা ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বলেছে। এই দামে বিক্রি করলে আমার ১০-১৫ হাজার টাকা লোকসান হবে।'
রামদাশ মুন্সির হাটের ইজারাদার ফরহাদুল আলম বলেন, 'এ বছর বেচা-বিক্রি একটু কম। ছোট ও মাঝারি গরুর দাম একটু বেশি। এখন শেষ মুহূর্ত। তবে হাটে আসা প্রায় পশু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বড় গরু কম বিক্রি হচ্ছে। তবে শেষ দিনের মধ্যে প্রায় গরু বিক্রি হবে বলে আশা করছি।'
বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হাওলাদার বলেন, উপজেলার প্রতিটি হাটে পুলিশ সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। সব জায়গায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপণ নন্দী বলেন, উপজেলায় চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে আরও সাড়ে ১৬ হাজার পশু। এসব পশু কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করা হবে।
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, গত সোমবার গাংনী উপজেলার শতবর্ষী বামন্দী পশু হাটে গরু-ছাগল এসেছিল প্রচুর। তবে সেই তুলনায় বাইরে থেকে বেপারী ও ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন কম। আশানুরূপ দাম না পেয়ে অনেকেই গরু-ছাগল বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। তারা রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য হাটে তুলবেন পশুগুলোকে। মঙ্গলবার ভোর থেকে অনেকেই ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন গরু ও ছাগল।
গাংনীর এই ঐতিহ্যবাহী পশুরহাটে মূলত বিভিন্ন জেলার বেপারী ও ব্যবসায়ীরা মূল ক্রেতা। সোমবার তাদের সংখ্যা ছিল কম। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি পশুর দাম ২০-২৫ হাজার বেশি। তবে খামারি আর গেরস্তদের দাবি, পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। গরু লালন-পালন করতে গত বছরের তুলনায় খরচ হয়েছেও দ্বিগুণ। তাই দাম একটু বেশি।
সরেজমিনে গত সোমবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক হাজার গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া রয়েছে। হাটের জায়গায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর পশু রাখা হয়েছে। বিকাল পাঁচটার পর থেকে অনেককে পশু নিয়ে হাট থেকে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
সহড়াবাড়িয়ার গরুর খামারি স্বপন আলী জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর পশুখাদ্যের দাম অনেক বেশি। গত বছর গরুর মাংসের কেজি ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। এ বছর তা ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোরবানির গরু বিশেষ যত্নে লালন-পালন করা হয়ে থাকে। তাই ৮০০ টাকা কেজি হিসাবে গরু বিক্রি করলেও খামারিদের লোকসান হবে। তাই অনেকে ঢাকার হাটে গরু তুলবেন বলে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।
\হবেপারী ইব্রাহিম ও সফি উদ্দীন জানান, তারা দুজন ১২ বছর ধরে যৌথভাবে গরু বেচাকেনা করছেন। ১৫ দিন আগে আলমডাঙ্গার হাট থেকে ৫টি গরু কেনেন সাড়ে ৭ লাখ টাকায়। গেল হাটে সেগুলো বিক্রি করেছেন মাত্র ৮ লাখ টাকায়। এ কয়দিন গরুর খাবার দেওয়া ও হাটে আনা নেওয়ার খরচ বাদে কিছুই লাভ হয়নি। তাই বাকি ২৭টি গরু ঢাকায় নেবেন।
মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জের কৃষক রহিম ও আলেক তিনটি গরু ও দুটি ছাগল নিয়ে এসেছিলেন। দুটি ছাগলের অন্তত দেড় মণ মাংস হবে। দুটি ছাগলের দাম হাঁকিয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ৩৫ হাজার টাকার বেশি দিতে নারাজ। তাই ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
হাটের ইজারাদার সিরাজুল ইসলাম জানান, ঈদের আগে হাটে পশু ভালোই উঠেছিল। তবে কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা হয়নি। খামারি আর গেরস্তরা বলছেন একেবারেই দাম নেই। আর বেপারীরা বলছেন দাম বেশি। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বেপারী ছাড়াও স্থানীয় বেপারীরা কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় ঢাকাসহ অন্যান্য হাটে তুলবেন বলে জানিয়েছেন।