পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু জবাই ও গোশত টুকরো করার জন্য দা, ছুরি অপরিহার্য। আর এ দা ছুরি তৈরি করছেন কামার শিল্পীরা। পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে হতাশার মধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। অন্য বছরগুলোতে দম ফেলবারও যেন ফুসরত ছিল না। কিন্তু এবার নতুন বিক্রির চেয়ে পুরনো যন্ত্রই মেরামত করে নিচ্ছেন গ্রাহক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌরশহরের দেশওয়ালীপাড়া, শিবগঞ্জ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের কুমুদগঞ্জ, ঝাঞ্জাইল, কালিকাপুর, গাওকান্দিয়া বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, চাকু, বটি, ধামাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম মেরামত করছেন কামাররা। এসব ব্যবহার্য জিনিস স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি জেলার অন্যান্য অঞ্চলের বাজারগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এ শিল্প জমে উঠলেও নতুনের চেয়ে পুরাতন কাজই এবার বেশি। দা ছুরিতে শান দিতে আসা মোহাম্মদ আলী বলেন, 'কয়েক দিন পর কামাররা আরও ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, তাই দা ছুরিতে শান দেওয়ার জন্য আগেই নিয়ে আসলাম। এবার দাম বেশির কারণেই নতুন দা ছুরি কেনা হচ্ছে না। পুরাতনগুলো দিয়েই এবারের কোরবানির কাজ শেষ করব।'
এনিয়ে কুমুদগঞ্জ এলাকার কারিগররা অভিযোগ করেন, তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারাদিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়। ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এলাকায় কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়। বাধ্য হয়ে পৈতৃক পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। বিগত দিনে অনেকেই সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন, কিন্তু তারা কোন প্রকার অনুদান পাননি।
এ নিয়ে অভিজ্ঞ কার্মকার সুবোধ আদিত্য বলেন, 'আমাদের পূর্ব পুরুষরাও এই কাজ করে আসছেন। ওই সময় কর্মকারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রাদির প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হারাচ্ছে। হয়তো একসময় এই পেশা আর থাকবে না। সারা বছর তেমন কাজ হয় না, কোরবানির ঈদ এলেই আমাদের ভালো কাজ হয়, এবার পুরাতন কাজই বেশি। এ শিল্পে যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া যেতো, তাহলে শত বছরের এই পুরনো ঐতিহ্য আবার ঘুরে দাঁড়াত।'