মাদারীপুরে চাহিদার চেয়ে বেশি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত

কাশিয়ানীতে প্রস্তুত ৬ হাজার ৮৮৯ পশু আড়াইহাজারে জমজমাট ২০টি হাট

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখর কোরবানির পশুর হাট -যাযাদি
এবারের কোরবানির ঈদে মাদারীপুর জেলায় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। উদ্বৃত্ত পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য জেলাগুলোতে পাঠানো হবে। এদিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে প্রস্তুত রয়েছে ৬ হাজার ৮৮৯টি। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জমে উঠেছে কোরবানির ২০টি হাট। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর জানিয়েছেন, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মাদারীপুরের পাঁচটি উপজেলায় প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করা এখন শেষ পর্যায়ে। এ বছর বিভিন্ন খামারে প্রায় ৩৬ হাজার গরু, ১৬৫টি মহিষ, ২৪৬টি ভেড়া এবং ৩৮ লাখের মতো ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জেলার চাহিদার চেয়ে বেশি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। খামারিরা বড় বড় গরু রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, মাদারীপুরে এবারের কোরবানির জন্য ৮ হাজার ৬৯৭টি খামারে ৩৬ হাজার ৫৯২টি গরু এবং ৩৮ হাজার ৭৬৭টি ছাগল প্রস্তুত রয়েছে। যেখানে জেলায় ৩৩ হাজার ৫৫০টি গরু এবং ৩৩ হাজার ২৫০টি ছাগলের চাহিদা থাকলেও জেলা কোরবানির জন্য এর চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে গরু ও ছাগল। অনেকেই তার শখের পালিত গরুটির শখ করে নাম দিয়েছে রাজাবাবু, ফাটাকেস্টো, বাহাদুর, এমনকি নায়কদের নামেও রয়েছে বিভিন্ন কোরবানির গরু। এছাড়া মাদারীপুরে রয়েছে ৩০ লাখ টাকা দাম হাঁকানো রাজাবাবু নামে কোরবানির গরু। জেলার খামারের গরুগুলো মধ্যম আকৃতি ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় খামারিরা খুশি। হাটে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায় এসব গরু। অনেক সময় খুচরা ক্রেতা ও পাইকাররা খামার থেকেই গরু কিনে নিয়ে যান। ভালো লাভ হওয়ায় দিন দিন মাদারীপুর জেলায় খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সদর উপজেলা দুধখালী ইউনিয়নের বলসা গ্রামের জালাল খানের খামারের ম্যানেজার বলেন, 'আমাদের খামারের গরু ছাগল, ভেড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে লালন পালন করা হচ্ছে। গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে দেশীয় খাবার খড়, খৈল, ভুসি, গুড়ের চিটা, লবণ, চাল-ডাল ও ছোলার-গুঁড়োসহ চাষ করা নেপিয়ার ঘাস। পশু চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী গরুগুলোকে দেওয়া হয় চিকিৎসা। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো মেডিসিন ব্যবহার করা হচ্ছে না।' ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাবুল চেয়ারম্যানের খামারের ম্যানেজার সুমন বলেন, 'প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে আমরা গরু, ভেড়া পালন করছি। কোনো ক্ষতিকর খাবার পশুকে দেওয়া হয় না। আমাদের খামারের বড় গরুর নাম দেওয়া হয়েছে রাজাবাবু, ফাটাকেস্টো, বাহাদুর। আশা করি এ বছর হাটে ভালো দাম পাওয়া যাবে।' মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুবোধ কুমার দাস বলেন, কোরবানিকে সামনে রেখে জেলার খামারিরা পশু মোটাতাজাকরণ করছেন। খামারিরা কোরবানির পশুকে যাতে ক্ষতিকর কোনো কিছু না খাওয়ায় সে বিষয়ে আমাদের সার্বক্ষণিক তদারকি রয়েছে। খামারিদের বিভিন্ন সময়ে আমরা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলায় কোরবানির জন্য বিভিন্ন খামারে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে মোট- ৬,৮৮৯টি কোরবানির পশু। এর মধ্যে গরু- ৪,০৫৫টি, মহিষ- ২টি, ভেড়া ২৮টি ও ছাগল ২,৮০৪টি। উপজেলায় প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিরা লাভবান ও সংসারে সচ্ছলতার জন্য খামারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে বাড়িতে বাড়িতে পশুর লালন পালন করছেন। কোরবানির শেষ দিকে তারা প্রত্যেকেই নিজেদের পশু বেশি দামে বিক্রির আশায় বেশি বেশি যত্ন নিতে কোমর বেঁধে নেমেছেন। একইভাবে খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা কোরবানির জন্য যে সব পশু প্রস্তুত রেখেছেন সেই পশু কোরবানির হাটে তোলার জন্য বেশি বেশি যত্ন নিচ্ছেন। ক্রেতাদের দৃষ্টি আর্কষণের জন্য যত প্রকার কৌশল আছে তার প্রত্যকটি প্রয়োগ করছেন খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা। গৃহ পর্যায়ে পালিত এবং খামারে পালিত পশুর যত্ন দেখে মনে হয় সবাই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। কি খামারি ও প্রান্তি চাষি কেউ পিছিয়ে নেই। সব মিলে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা। ইতোমধ্যে অনেক খামারি এবং প্রান্তিক চাষি তাদের পালিত পশু বিক্রি শুরু করেছেন। অনেকে বেশি দামের আশায় নিজেদের পালিত পশুগুলো ধরে রেখেছেন, দেরি করে বিক্রির জন্য হাটে তুলবেন তারা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাক্তার পৃথ্বীজ কুমার বলেন, নিয়মিত খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা যথেষ্ট সেবা দিয়েছি। আশা করি উপজেলার চাহিদা পূরণ হবে। আগামী বছরে আরও বেশি পশু প্রস্তুত থাকবে।' আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ১০টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর ২০টি হাট। হাটগুলোতে ইতোমধ্যেই বেচাকেনা শুরু হয়েছে পুরোদমে। অনেকেই কোরবানির পশু কিনে ফেলেছেন। আবার অনেকে পশু রাখার অসুবিধার কথা ভেবে কিনতে বিলম্ব করছেন। মঙ্গলবার উপজেলা সদরের শাহজালাল মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন লাখ মিয়ার মাঠে হাট বসে। ওই হাটে মোটামুটি ভালো বেচাকেনা হয়েছে বলে ক্রেতারা জানান। উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, এ বছর ১০ ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে মোট ২০টি হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নগুলোতে ১৫টি এবং দুটি পৌরসভায় ৫টি হাট বসছে। এর মধ্যে বিশনন্দী ফেরিঘাট এলাকায় বিশনন্দী কোরবানির পশুর হাট, আড়াইহাজার লাখ মিয়ার বালুর মাঠ পশুর হাট এবং ষোলগ্রাম সমম্বিত বগাদী কান্দাপাড়া গোরস্তান সংলগ্ন পশুর হাট উলেস্নখযোগ্য। হাটগুলোতে দূর-দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের থাকা খাওয়ার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে বলে হাট কমিটির লোকজন জানান। হাটগুলোতে হাসলির হার অত্যন্ত নগণ্য। আড়াইহাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আহসানউলস্নাহ জানান, প্রতিটি হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য এবং চুরি ও ছিনতাই রোধে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।