গুরুদাসপুরে খাল খননে দূর হলো জলাবদ্ধতা

রক্ষা পাবে ৫ হাজার বিঘা কৃষিজমি

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
দখল-দূষণে বিলুপ্ত হওয়া নাটোরের গুরুদাসপুরের মির্জামামুদ খাল পুনর্খনন করার ফলে এলাকাবাসীর জন্য আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের সর্বত্র অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় সারাবছরই জলাবদ্ধতায় থাকেন এলাকাবাসী। এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে খালটি পুনর্খননের উদ্যোগ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। জানা যায়, পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়ারী ইউনিয়নের কাছুটিয়া গ্রাম থেকে তৎকালীন প্রমত্তা বড়ালের শাখা খাল মির্জামামুদের উৎপত্তি। সেখান থেকেই গুরুদাসপুর উপজেলার কান্দাইল, বৃ-চাপিলা, ধানুড়া, পুরুলিয়া, তুলাধোনা, পুটিখাঁ, চন্দ্রপুর, চকআদালত খাঁ, গোপিনাথপুর, বৃকাশো হয়ে চাকলের বিল দিয়ে সোনাবাজু গ্রামের তুলসিগঙ্গা নদীতে মিশেছে মির্জামামুদ খাল। নদী ও পরিবেশকর্মী এসএম শহিদুল ইসলাম জানান, আশির দশকে পদ্মার উৎসবমুখর রাজশাহীর চারঘাটে নদীকে সংকুচিত করে অপরিকল্পিতভাবে স্স্নুইসগেট নির্মাণের ফলে প্রমত্তা বড়ালের সঙ্গে সঙ্গে মির্জামামুদ খালেরও মৃতু্য হয়। দখল-দূষণে বিলুপ্ত হয়ে যায় মির্জামামুদ খালটি। পঞ্চাশ বছর পর হলেও খালটি পুনর্খনন করায় জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে পানি পাবেন খালপাড়ের মানুষরা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) গুরুদাসপুরের সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, '২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের গত ৪ ফেব্রম্নয়ারি পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মির্জামামুদ খাল উদ্ধার করে পুনর্খনন কাজ শুরু হয়। ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের ধানুড়া বাজার মিল্কি ব্রিজ হতে কৈডিমা উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা হয়েছে। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা।' প্রকৌশলী সাইদুর আরও বলেন, মির্জামামুদ খালটি পুনর্খননের ফলে আশপাশের ২৫০ হেক্টর জমির সেচ সুবিধা পাবে কৃষকরা। জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে ৬৩০ হেক্টর কৃষিজমি। এতে সরাসরি উপকৃত হবেন ১৫ হাজার কৃষক। মির্জামামুদ খালে মৎস্য চাষের পাশাপাশি খালের দুইপাড়ে উন্নতমানের ঘাস ও কলা চাষের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন এলাকাবাসী ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। খালের বসতিরা এই ঘাস, মাছ ও কলা চাষের সুযোগ পাবেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, 'বিএডিসির খননকৃত মির্জামামুদ খালের দুইপাড়ের নতুন মাটিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক উন্নতজাতের ঘাসের চারা রোপণ করা হয়েছে। খাল সংলগ্ন এলাকায় জলবায়ু সহিষ্ণু হাঁস-মুরগির খামারও গড়ে তোলা হবে। চাপিলা ইউনিয়নের বৃ-চাপিলার কৃষক আব্দুর রহমান, তুলাধোনা বাজারের করিম ব্যাপারী, কান্দাইলের হাফিজুর রহমান (ব্যাংক কর্মকর্তা), নয়ন আলী মেম্বার, প্রভাষক রবিউল করিমসহ এলাকাবাসীর দাবি শুধু সাড়ে ৪ কিলোমিটার খাল খনন নয়, পুরো মির্জামামুদ খালই পুনর্খনন করতে হবে। মৎস্য এবং কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ার জন্য বৃ-চাপিলার পাঠানপাড়া এলাকায় খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণেরও দাবি জানান তারা। উপকারভোগী কৃষক মাসুদ রানা, সেলিম রেজা, শহিদুল খানসহ স্থানীয়রা জানান, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে মির্জামামুদ খালটি পুনর্খননের ফলে জলাবদ্ধতা আর থাকবে না। পানি নিষ্কাসন ও সেচ সুবিধাসহ হাঁস-মুরগির খামার হলে উপকৃত হবেন তারা। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এ প্রসঙ্গে বলেন, এলাকার নদী, খাল-বিল উদ্ধার এবং খননের মাধ্যমে মৎস্য ও কৃষি বিপস্নব ঘটাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মির্জামামুদ খাল পুনর্খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় পর্যায়ক্রমে পুরো খালটিই পুনর্খনন করা হবে।