টুং-টাং শব্দে মুখর কামারশালা

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুরে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে টুং-টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারশালার কামারিরা। ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। তবে ব্যস্ততা থাকলেও এই ঈদে কাজের মজুরি তেমন না পাওয়ায় তেমন আনন্দ উৎফুলস্নতা নেই কামারিদের মধ্যে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পৌরসদরের কামারপাড়া মহলস্নায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টুং-টাং শব্দে জমে উঠেছে গরু, ছাগল, মহিষ কোরবানির পশু কাটাকাটির কাজে ব্যবহার করা দা-বঁটি, ছুরি-চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি ও মেরামত কাজ। কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুং-টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে কামারশালাগুলো। আগুনের শিখায় তাপ দেওয়া হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে দা-বঁটি, ছুরি-চাপাতি। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন কামারিরা। দম ফেলার সময় না থাকলেও মজুরি কম পাওয়ায় তেমন ভালো নেই কামারিরা। কামারি দিপক কর্মকার জানান, কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ পূর্বে থেকে কাজ শুরু হতে থাকে। এখন অনেক কাজ জমে গেছে। ভোর রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অনেক সময় বাড়তি লোকও নিতে হয়। তবে এ বছর তিনিসহ কোনো কামারিদের মুখে হাসি নেই। কারণ চায়না থেকে আসা মালের লোহা, কয়লা ও শ্রমিকদের মজুরি যে পরিমাণ দিতে হয়, এ বছর কাজের পর গ্রাহকরা তেমন টাকা দিচ্ছেন না। গত বছরও দা-বঁটি পুড়িয়ে মজুরি পেয়েছেন ১০০-১৫০ টাকা, রামদা ১৫০-১৮০ টাকা, ছুরি ৫০-৮০ টাকা। এ বছর নতুনের চেয়ে মেরামতের কাজ সবচেয়ে বেশি। দা-বঁটি পুড়িয়ে গ্রাহকরা মজুরি দিচ্ছেন ৭০-৮০ টাকা। চাপাতি ১০০ ও ছুরি ৩০-৪০ টাকা দিচ্ছেন। প্রাপ্য মজুরি চাইলেও তা পাচ্ছেন না তারা। কাজ বেশি থাকলেও মজুরি কম। এ কারণে কামারিদের মুখে এ বছর হাসি নেই। কামারি রনেশ কর্মকার জানান, তার কামারশালায় দুইজন সারা বছর কাজ করেন। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকেন তারা। এ বছর কাজ বেশি, তাই শ্রমিক নিয়েছেন পাঁচজন। কিন্তু মালামাল ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেরামত কাজ করে যে মজুরি পাচ্ছেন, তা হিসাব করলে বেশি লাভ হচ্ছে না। মানুষ বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঠিকই কিনে নিয়ে আসছে নায্যমূল্য দিয়ে। কিন্তু তাদের কাছে এসে প্রাপ্য মজুরি দিচ্ছে না। কামারশালায় দা-বঁটি মেরামত করতে আসা নারায়ণপুর গ্রামের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন জানান, ঈদের বাজার করতে যাওয়ার পথে দা-বঁটি দিয়ে গিয়েছিলেন কামারশালায়। বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে তিনি দা-বঁটি নিয়েছেন। তবে মজুরি যা চেয়েছিল, তা তিনি দিতে পারেননি। পরে পুষিয়ে দেবেন বলে কামারিকে জানিয়েছেন। কামারশালায় চাপাতি তৈরি করে নিতে আসা যুবক মাসুদ রানা বলেন, তার বাড়িতে পূর্বে দা-বঁটি, ছুরি ছিল। শুধু ছিল না চাপাতি। তাই যেগুলো ছিল, সেগুলো মেরামত করে নিলেন আর চাপাতি কামারশালা থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। তবে গত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর চাপাতির দাম বেশি।