শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

কোরবানির পশুর হাটে বিশেষ আকর্ষণ দৈত্যাকৃতির গরু ও মরুর দুম্বা

স্বদেশ ডেস্ক
  ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তালগাছি পশুরহাটে বিক্রির জন্য আনা কোরবানির পশু -যাযাদি

মুসলিম উম্মাহ্‌র দুয়ারে কড়া নাড়ছে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আসন্ন এই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জমতে শুরু করেছে পশুর হাট। এবারের কোরবানির হাটে বিশেষ আকর্ষণ দৈত্যাকৃতির গরু ও মরুর দুম্বা। হাটে বাড়ছে কেত্রদের ভিড়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের রাউজানে কোরবানির পশুর হাট এখন পাড়ায় পাড়ায়। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাপ্তাহিক পশুহাটগুলো এখন আগের মতো জমে উঠে না। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে ডেইরি ফার্মের দিকে। অধিকাংশ ফার্মে প্রস্তুত করা হয় কোরবানির জন্য মোটাতাজা গরু। উপজেলার যেসব প্রাচীন সাপ্তহিক হাট রয়েছে সেগুলোর দিকে নজর মধ্যবিত্ত শ্রেণির কোরবানিদাতাদের। উচ্চবিত্ত ও ধনী শ্রেণির চোখ খামারগুলোর দিকে। এখন থেকে শুরু হয়েছে গ্রামীণ জনপদে প্রতিষ্ঠিত খামারে কোরবানিদাতা মানুষের ছোটাছুটি। নিজস্ব গাড়িতে চড়ে পরিবার নিয়ে খামারে খামারে ঘুরে গরু পছন্দ করছেন। কেউ পছন্দের গরু কিনে ঈদের এক দু'দিন আগে নেওয়ার শর্তে রেখে যাচ্ছেন।

এ উপজেলায় প্রাচীনকাল থেকে যেসব জৌলুসপূর্ণ কোরবানির পশু হাট ছিল এর মধ্যে ফকিরহাট, কাঁলাচান্দ হাট, লাম্বুরহাট, গৌরী শংঙ্করহাট, রমজান আলী চৌধুরীহাট, নোয়াপাড়া চৌধুরীহাট অন্যতম। গ্রামীণ জনপদের মানুষ নিজেদের ঘরে পালন করা গরু-ছাগল কোরবানির এসব মৌসুমি হাটে নিয়ে আসে। আবার কোনো কোনো স্থানে অস্থায়ী হাট বসিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ী পশু বেচাকেনা করে। কোনো ব্যবসায়ী রাস্তার পাশে অস্থায়ী পশু রাখার সেট করে ২০-৩০টা গরু এনে বিক্রি করছে।

খবর নিয়ে জানা যায়, এবার কোরবানির পশু বিক্রিতে যেসব সৌখিন খামারি বিনিয়োগ করেছেন, প্রায় সবারই চেষ্টা ছিল শিল্পপতি ও ধর্ণাঢ্য কোরবানিদাতাদের জন্য দৈত্যাকৃতির পশু প্রস্তুত করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, এরকম কয়েকটি খামারের মধ্যে উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নের বারাকা এগ্রো নামে একটি খামারে অর্ধশতাধিক বড় ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি রয়েছে দৈত্য আকৃতির। নানা নামে ডাকা এসব ষাঁড়ের দাম হাঁকানো হচ্ছে আড়াই থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। স্থানীয়রা বলেছেন- প্রায় প্রতিদিন প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে এখানে আনাগোনা সৌখিন কোরবানিদাতাদের। বিক্রিও হচ্ছে গরু। কেউ কেউ দরদাম করে রেখে যাচ্ছে, অগ্রিম দিয়ে যাচ্ছে কয়েকদিন খামারে রাখার শর্তে।

খামারের মালিক সুমন দে বলেছেন, ইতোমধ্যে তার খামারের বেশ কিছু গরু বিক্রি হয়েছে। ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি ও শিল্পপতি শ্রেণির লোকজন তার গরুর ক্রেতা। যেসব গরু বিক্রি করা হয়েছে সেগুলোর দাম দুই থেকে আট লাখ টাকার মধ্যে। এখন বিক্রির জন্য অবশিষ্ট আছে দুই থেকে ১০ লাখ টাকা দামের ৪০টি গরু।

উপজেলার দক্ষিণাংশের বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা খামারটি হা-মিম এগ্রো নামে পরিচিত। এখানে সারা বছরই চলে বেচাকেনা। প্রাপ্ত অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক গরুর সংখ্যা এই খামারে পাঁচ শতাধিক।

খামারের মালিক আবদুল হাকিম বলেন, তার খামারটি মৌসুমি খামার নয়। এটি স্থায়ী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সারা বছর চলে দুধ ও মাংস। তবে কোরবানির ঈদের চাহিদা পূরণ করতে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয় নানা জাতের গরু। খামার ছাড়াও এসব গরু বিক্রির জন্য হাটহাজারীর কুয়াইশ রাস্তার মাথায় অস্থায়ী সেট করেছেন। এই ব্যবসায়ীর মতে কোরবানির ঈদের জন্য তৈরি করা হয়েছে শতাধিক নানা জাতের গরু।

মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের মধুখালীতে পবিত্র ঈদুল আজহা কোরবানি উপলক্ষে জমতে শুরু করেছে পশুর হাট। এবারের মধুখালীর বিশেষ আকর্ষণ মরুর দুম্বা। উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের আশাপুর গ্রামে অবস্থিত রাজ্জাক খান জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার খানের প্রতিষ্ঠিত দুম্বার খামারটি। বর্তমানে খামারটিতে ৩০টি দুম্বা রয়েছে।

দুম্বা খামারের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারী ফেরদৌস হাসান জানান, ২০২২ সালে সৌদি আরব ও ভারত থেকে আমদানিকৃত ২০টি দুম্বা নিয়ে খামারটির যাত্রা শুরু। বর্তমানে খামারে ৩০টি দুম্বা আছে। বিদেশ থেকে খামার পর্যন্ত দুম্বা পৌঁছাতে প্রতিটির খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে খামারের মালিক ২০টি দুম্বা বিক্রি করবেন। প্রতিটি দুম্বার দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ টাকা।

এদিকে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে উপজেলার স্থায়ী ৫টি ও অস্থায়ী একটি পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। হাটে আসতে শুরু করেছে গরু-ছাগল। এ বছর উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় এক হাজার ১৫৮টি খামারে কোরবানির পশু তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুদেব কুমার দাস জানান, এ বছর উপজেলার কোরবানি পশুর চাহিদা রয়েছে ১৪ হাজার ৯৯৩টি। আর কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে ১৫ হাজার ৬৯৬টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ৭০৩টি। ১ হাজার ১৫৮টি খামারে পালন বা উৎপাদিত হয়েছে ষাঁড়-৩ হাজার ১৭১টি, বলদ-৪৩টি, গাভী-৪১২টি, ছাগল ১১ হাজার ২৭৩টি, মহিষ ১৯টি, ভেড়া-৫৫টি এবং দুম্বা-৩০টি। এ বছর উপজেলার নিজস্ব খামারে উৎপাদিত পশুই উপজেলার কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। শাহজাদপুরের তালগাছী, জামিরতা, কুরশী, বানতিয়ার স্থায়ী পশুর হাটে ব্যাপক পশুর আমদানি লক্ষ করা গেছে। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে নুকালী হাইস্কুল মাঠ পশুর হাট, নরিনা হাইস্কুল মাঠ পশুর হাট, ও বাদলবাড়ী খেলার মাঠে পশুর হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে ক্রেতাসহ গরু ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পশুর হাট।

উপজেলার অন্যতম পশুর হাট হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী তালগাছী হাট। গত রোববার সরেজমিনে ঘুরে এই হাটে বিশাল আকৃতির গরু, ছাগল ও ভেড়া বিক্রি করতে দেখা গেছে। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম তালগাছী পশুর হাট সাধারণত সপ্তাহে একদিন রোববার হাট বসায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এখানে দেশীয় গরুর পাশাপাশি শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু ও মহিষ বেচাকেনা হয়ে থাকে। একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ের চেয়ে এ বছর গরু, মহিষের দাম বেশি। স্থানীয় গরু খামারি ও বিক্রেতাদের দাবি, গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশুপালনে খরচ বেড়েছে। এজন্য পশুর দামটা একটু বেশি। সর্বোপরি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরুর দামও একটু বেশি। তাই বিক্রি হচ্ছে কম। তালগাছী হাটে গরু বিক্রি করতে আসা খামারি আমজাদ আলী বলেন, 'এবার ৯টি গরু হাটে তুলেছি। কিন্তু মাত্র তিনটি গরু বিক্রি করেছি। তাতে যা বুঝলাম এবার ছোট গরুর চাহিদা বেশি। তবে এ বছর আশানুরূপ লাভ হবে না।'

কোরবানির গরু কিনতে আসা শাহজাদপুর শহরের খোরশেদ আলম বলেন, 'কোরবানির ঈদের জন্য ভাগে গরু কিনব বলে তিনজন এসেছি। বাজার ঘুরে দেখলাম গতবারের থেকে এবার দাম বেশি। তবে হাতে সময় আছে দেখেশুনেই কিনব।'

এদিকে হাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষের ইকবাল হাসান নয়ন জানিয়েছেন, 'হাটের সার্বিক নিরাপত্তায় অনেক রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের যেন কেউ কোনো কারণে প্রতারিত করতে না পারে সেজন্য আমাদের নিজস্ব মনিটরিং টিম আছে।'

শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিলস্নাল হোসেন বলেন, 'ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে শাহজাদপুরে প্রায় ৮৬ হাজার ৬৬১ পশু প্রস্তুত করছেন খামারিরা। পশুর হাটে ঈদ উপলক্ষে ক্যাম্পিং করছি। কোনো ক্রেতার গরু নিয়ে সন্দেহ থাকলে আমাদের জানালে সেই গরুটি আমরা পরীক্ষা করে দেখি। আর কোনো রোগ আছে কিনা বা কোনো সমস্যার বিষয়ে ক্রেতাকে অবগত করে থাকি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে