শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

পাহাড়ের যে অঞ্চলে ১২ মাসই থাকে তীব্র পানি সংকট!

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০
রাঙামাটির লংগদুতে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে বাধ্য হয়ে খাল, ঝিরি ও নদীর দূষিত পানি পান করছে এলাকাবাসী -যাযাদি

সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার লংগদু সদর ও আটারকছড়া ইউনিয়নের গদাবাইন্যা ছড়া, রামতনু ছড়া, শিলাছড়া, উদয়পাড়া, কাঁকড়া খিয়া, শিলাছড়ি, পাঠান টিলা ও দাদিপাড়াসহ ৭-৮টি এলাকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর খেটে খাওয়া ৫ শতাধিক পরিবারের হাজারো সাধারণ মানুষ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এ অঞ্চলে এখনো কাটেনি সুপেয় পানির সংকট। ফলে বাধ্য হয়ে খাল, ঝিরি ও নদীর দূষিত পানি পান করছেন এলাকাবাসী। এতে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আটারকছড়া ও সদর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকার নারী-পুরুষ, আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই প্রতিদিন খাওয়ার পানির জন্য পাহাড়ি কূপ, ছড়া বা ঝিড়িতে কলসি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। গ্রীষ্মে পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না তারা। এসব ঝিড়ি বা কূপে শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায় ১ থেকে ২ কলসি, অনেক সময় তাও পাওয়া যায় না। এ অঞ্চলের পাহাড়ি পলস্নীগুলোতে গভীর নলকূপ ও বিশুদ্ধ পানির যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। বিশেষ করে খাওয়া ও ব্যবহারের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খাওয়ার পানির সংকট মেটাতে খালের পানি পান করছে অনেকে। এছাড়াও যথেষ্ট পানির ব্যবস্থা না থাকায় চাষাবাদে অনগ্রসর এ জনগোষ্ঠী।

গদাবাইন্যা ছড়া, উদয়পাড়া ও কাঁকড় খিয়া এলাকার তুষার চাকমা, রিমেল ও জয়রিতা চাকামা জানান, পাড়ায় দু-একটি নলকূপ আছে, তবে তা নষ্ট হয়ে গেছে গত বছর। পানির তৃষ্ণা মেটাতে খাল, ছড়া, কূপ থেকে পানি নিতে হয়।

শিলাছড়ি এলাকার পাহাড়ি নারীরা জানান, পুরো এলাকায় কয়েকটি নলকূপ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে কেবল একটি নলকূপে পানি পাওয়া যায়। ফলে বছরের অধিকাংশ সময়ই আমরা পানি সংকটে থাকি। যেন দেখার কেউ নেই।

তারা আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও জনপ্রতিনিধিদের তদবির না থাকার কারণে এখানে বিশুদ্ধ ও সারা বছর পাওয়া যায় এমন প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়নি। পানির এই সংকট মেটাতে বিভিন্ন স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে ঘোলা পানি খাচ্ছি।

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ পূর্ণ রতন চাকমা আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, আমাদের আদি পুরুষরা এ অঞ্চলে যে অবস্থায় বসবাস করে গেছে এ সময়ে এসেও অর্থাৎ স্বাধীনতার পর এতো বছর পেরিয়ে গেলেও পানি সংকটের সমস্যা নিরসন হয়নি। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ সংকট দূর করুক।

স্থানীয় আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অজয় চাকমা মিত্র বলেন, চেষ্টা করছি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার পানির সংকট মেটাতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। পাহাড়ের অনেক লোক ২ থেকে ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে আসে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রম্নত এ পানি সংকট দূর করা হবে।

এ বিষয়ে লংগদু উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা নিয়ে সব এলাকায় সরকারি নলকূপ স্থাপন করছি, এখনো কিছু দুর্গম এলাকা বাকি আছে তবে পর্যায়ক্রমে হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, যে এলাকায় যে ধরনের টিউবওয়েল প্রয়োজন আমরা চেষ্টা করছি পাহাড়ি অঞ্চল ভেদে সে ধরনের টিউবওয়েল স্থাপন করা।

সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, এলজিইডি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের দেওয়া রিংওয়েল, নলকূপগুলো অল্প গভীরতায় স্থাপন করা হয় বর্ষা মৌসুমে, যার কারণে শুষ্ক মৌসুম এলে পানি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। ফলে অনেকে সরাসরি ঝিড়ির পানি ব্যবহার করছে, করার কিছুই নেই!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে