রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

গাজীপুরে কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বাড়ছে দূষণ

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
গাজীপুরে কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বাড়ছে দূষণ

গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, ডাস্ট ও জেনারেটরের উচ্চ শব্দের কারণে আশপাশের এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে প্রায় বাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবারের লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

প্রায় আট বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না পরিবারগুলো। প্রতিনিয়ত দূষণের শিকার হচ্ছেন শিশু, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ বাসিন্দারা। পরিবেশ দূষণের কারণে প্রচন্ড গরমের মাঝেও বাসাবাড়ির দরজা-জানালা দিন-রাত বন্ধ রাখতে হচ্ছে তাদের। এ ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে কারখানার মালিক পক্ষের একটি মহল হুমকি দেয় ও ভয়ভীতি দেখায়। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন থানাধীন মোগরখাল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নাজিমউদ্দিন সরকার তাদের বাসার পাশের একটি কারখানার দূষণ থেকে রক্ষা পেতে ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

তার ওইসব আবেদনপত্র ও মৌখিক অভিযোগে জানা গেছে, মহানগরীর বাসন থানাধীন মোগরখাল এলাকার ফারদার গার্মেন্টসের পূর্বপাশে বহুবছর আগে থেকে জনসাধারণ বাড়িঘর করে বসবাস করছেন। তাদের বাড়ির প্রায় দেওয়াল ঘেঁষে অবস্থিত ওই গার্মেন্টস'র কাপড় কাটার নির্গত ডাস্ট, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তুলার কনা, দূষিত বায়ু, ধোঁয়া ও ধুলাবালি বাতাসে উড়ে এসে কারখানার পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরে প্রবেশ করছে। বাতাসের সঙ্গে মিশ্রিত এসব ডাস্ট রাতদিন তিনিসহ পরিবারের সদস্যদের ও আশপাশের লোকজনের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহের প্রবেশ করায় অ্যাজমা, চর্ম রোগ ও এলার্জিজনিত নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। কারখানার বিশাল জেনারেটরের উচ্চ শব্দে আশপাশের বাসার ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিকভাবে লেখাপড়া করতে বা ঘুমাতে পারছে না, এমনকি বয়স্কদের হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। স্থানীয়রা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। দীর্ঘদিন এই রোগে ভুগে নাজিম উদ্দিন সরকারের বাবা সাহাজ উদ্দিন সরকার দু'বছর আগে মারা গেছেন। শিল্পায়নের নামে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে বাপ-দাদার ভিটামাটি ছাড়ার উপক্রম হয়েছে স্থানীয় অনেকে পরিবারের।

তিনি আরও জানান, তার আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর আগারগাঁও ঢাকা থেকে ফার্দার গার্মেন্টস'র বিরুদ্ধে একটি নোটিশ করে। তাতে বলা হয়, কারখানার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণপূর্বক পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়ন গ্রহণ না করা পর্যন্ত কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু তারপরও স্থানীয় প্রশাসন কোনোরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকার ওই নির্দেশ অমান্য করে কারখানা কর্তৃপক্ষ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভুক্তভোগী নাজিমউদ্দিন সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া সাংবাদিকদের জানান, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়ম অনুযায়ী কারখানার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে মামলা করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় এর সুরাহা হবে।

এ বিষয়ে নাজিম উদ্দিন সরকার বলেন, মামলা করলে বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও এই মামলা শেষ হবে না। আর ততদিনে হয়তো বাসাবাড়ি রেখে স্থানীয়দের অন্যত্র চলে যেতে হবে।

এ বিষয়ে ফার্দার গার্মেন্টস কারখানার ম্যানেজার সোহেল রানা সাংবাদিকদের জানান, 'বিরোধপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যে সব ফাইন্ডিংস দিয়েছে তা কারখানার পক্ষ থেকে পূরণ করা হয়েছে। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানটিও টিকিয়ে রাখতে হবে এবং দুই হাজার ওয়ার্কারকেও কষ্ট দেওয়া যাবে না। তাই অ্যাডজাস্ট ফ্যান লাগানো হয়েছে। তবে এতে আশপাশের লোকজনের তেমন কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। কারও ক্ষতি করার তাদের উদ্দেশ্য নয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে