রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

হরিরামপুরে চার বছরেও শেষ হয়নি রাস্তার কাজ

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নয়াবাজার থেকে ডেগিরচর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের দেড় বছরের কাজ, চার বছরে অর্ধেকও শেষ হয়নি। প্রায় ৩ বছরের অধিক সময় ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী। কাজের শুরুতে মাটি খুঁড়ে বক্স করে নামেমাত্র কিছু বালু ফেলে রাখা হয়। বক্স করার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটেই চলাচল করতে পারছেন না পথচারীরা। এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় বাহাদুরপুর সড়কের নয়াবাজার থেকে ডেগিরচর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তার পিচ ঢালাইয়ের জন্য ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ১ কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ২৮১ টাকা দরে, কাজটি পায় মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

পরে ২০২১ সালের মার্চ মাসে রাস্তাটির কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু তিন বছরে শুধু রাস্তা খুঁড়ে বক্স করে কিছু কিছু স্থানে বালু ফেলে রাখা হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাস থেকে রাস্তাটির কাজ বন্ধ রাখা হয়।

সরেজিমন গেলে একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, রাস্তাটি প্রায় তিন বছর আগে মাটি খুঁড়ে রাখায় এ রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না। একটু বৃষ্টি হলেই কোথাও কোথাও পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়। এতে কারও হাঁটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ রাস্তা দিয়ে কৃষিপণ্যসহ কোনো মালামালই আনা নেওয়া করা যাচ্ছে না। ফলে এ এলাকার কৃষকরা কৃষিপণ্য নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। কেউ অসুস্থ হয়ে জরুরিভাবে তাকে হাসপাতালে নেওয়া নিয়েও পড়তে হয় বিপদে। এ ছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই এ রাস্তা দিয়ে দুটি বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও চলাচলে অনেক অসুবিধা হয়।

ইজিবাইক চালক রোমান বলেন, 'এই রাস্তাটি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ খুঁড়ে ফেলে রাখছে। আমরা মালামাল নিয়ে গাড়ি চালাতে পারি না। গতকাল ১০-১২ মণ ভুট্টা নিয়ে আমার গাড়ি উল্টে যায়। একটু বৃষ্টি হলেই আমরা যাতায়াত করতে পারি না। অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।'

ডেগিরচর গ্রামের বাসিন্দা আরজু প্রামাণিক বলেন, 'আমাদের এই রাস্তাটা অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু ৪ বছর ধরে রাস্তাটি এভাবে পড়ে আছে। আমাদের এই রাস্তার বেহাল দশা দেখারও কেউ নেই।'

একই গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল বারেক জানান, 'এই রাস্তা দিয়ে ভ্যানে করে মাল নেওয়ার সময় ভ্যান উল্টে আমার হাত ভেঙে গেছে। আজ আমি পঙ্গু। রাত-বিরাত রোগী নিয়েও বিপদে পড়তে হয়। কোনো গাড়ি আসতে পারে না।' গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাফফর হোসেন জানান, 'তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তাটি খুঁড়ে কাজ বন্ধ রয়েছে। রাস্তা খুঁড়ে রাখায় একটু বৃষ্টি হলেই মানুষের চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভ্যান, রিকশা কিংবা নসিমনে এই এলাকার কৃষিপণ্যও হাট-বাজারে নেওয়া যায় না। রাস্তাটি এখন এলাকার জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২-৩ দিন আগে যেখানে-যেখানে জলাবদ্ধতা হয়, সেখানে নিজে কিছু বালু ফেলে দিছি। রাস্তাটি কেন যে এভাবে পড়ে আছে তাই বুঝলাম না।'

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মাজহারুল হক আকন্দ জানান, আগের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন জেলা থেকে টেন্ডার দিলে কাজ শুরু হয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে