পৈতৃক বাড়িতে নানা অনুষ্ঠানমালা
ঔপন্যাসিক ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্তের জন্মদিনে বর্ণাঢ্য আয়োজন
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি
প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র কাহিনীকার ও চিকিৎসক নীহাররঞ্জন গুপ্ত বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল। ১৯১১ সালের ৬ জুন পিতা সত্যরঞ্জন গুপ্তের কর্মস্থল কলকাতায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আজ এই গুণী ঔপন্যাসিক ও চিকিৎসকের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী। জন্মস্থান কলকাতায় হলেও তার পৈতৃক ভিটা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদী পাড়ের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-জনপদ ইতনায়। প্রায় এক একর ২০ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত তার পৈতৃক বাড়িটি জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করেছে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়।
এই গুণী সাহিত্যিকের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এবার প্রথম জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্ত ফাউন্ডেশনের আয়োজনে তার পৈতৃক ভিটা ইতনায় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহকারে বরেণ্য লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, শিল্পীর জীবন ও কর্মের ওপর সেমিনার, নীহাররঞ্জন সড়ক উদ্বোধন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্বার বিতরণ ও কবিগানের আসর।
জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন- খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হেলাল মাহমুদ শরীফ। নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ডীন ড. জীবন কৃষ্ণ সাহা। প্রথমবারের মতো এই বরেণ্য লেখকের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্ত চাকরিজীবী পিতার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকালে ১৯৩০ সালে তিনি কোন্ননগর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে কৃষ্ণনগর কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই তিনি আইএসসি পাস করে কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর ডাক্তার হিসেবে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। চাকরিজীবনের বাধ্যবাধকতা তার কাছে বিরক্তিকর মনে হওয়ায় তিনি এই চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ব্যক্তিগতভাবে আবার ডাক্তারি পেশায় নিযুক্ত হন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কলকাতায় বিশেষ পরিচিত হয়ে ওঠেন।
নীহাররঞ্জন গুপ্তের শৈশব থেকে সাহিত্যে হাতে খড়ি হয়েছিল। ১৬ বছর বয়সেই তার প্রথম লেখা উপন্যাস 'রাজকুমারী' ছাপা হয়।
তার লিখিত উপন্যাসের সংখ্যা দুইশ'রও অধিক। তার প্রকাশিত উপন্যাসের মধ্যে- 'মঙ্গলসূত্র', 'উর্বশী সন্ধ্যা', 'উল্কা', 'বহ্নিশিখা', 'অজ্ঞাতবাস', 'অমৃত পাত্রখানি', 'ইস্কাবনের টেক্কা', 'অশান্ত ঘূর্ণি', 'মধুমতি থেকে ভাগীরতী', 'কোমল গান্ধার', 'ঝড়', 'অপারেশন', 'ধূসর গোধূলী', 'উত্তর ফাল্গুনী', 'কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী', 'কালো ভ্রমর', 'ছিন্নপত্র', 'কালোহাত', 'ঘুম নেই', 'পদাবলী কীর্তন', 'লালু ভুলু', 'কলঙ্ককথা', 'হাসপাতাল', 'কাজল লতা ও কিশোর সাহিত্য সমগ্র উল্যেখযোগ্য।
কালজয়ী লেখক নীহাররঞ্জনের চলিস্নশের অধিক উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে- উলেস্নখযোগ্য 'উল্কা', 'বহ্নিশিখা', 'উত্তর ফাল্গুনী', 'লালুভুলু', 'হাসপাতাল', 'মেঘ কালো', 'রাতের রজনীগন্ধা', 'নিশিপদ্ম', 'নূপুর', 'ছিন্নপত্র', 'বাদশা', 'কোমল গান্ধার', 'মায়ামৃগ', 'কাজললতা', 'কন্যাকুমারী', 'কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী' প্রভৃতি। গোয়েন্দা কাহিনী 'কিরীটি রায়'।
ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্ত ফাউন্ডেশনের অন্যতম সংগঠক চিত্রশিল্পী আলী আজগর রাজা বলেন, 'দেরীতে হলেও জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্তের জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে ইতনায়। এ জন্য আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।'