সাঁথিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁদুর ৫৩ বছরেও মেলেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
যুদ্ধ করে রাজাকার ও হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করলেও নিজের নামটি বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় লেখাতে পারেননি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের উজান খানমামুদপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান চাঁদু। জীবনবাজি রেখে তিনি অংশ নেন পাবনা জেলাসহ সাঁথিয়া উপজেলার কয়েকটি অভিযানে। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি স্বরূপ সব সনদ থাকলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তা গেজেটভুক্ত হয়নি। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে ঘুরতে আজ তিনি ক্লান্ত। নানা অসুখ ভর করেছে শরীরে। আপিল করেও হয়নি কোনো সুরাহা। সরকার প্রদত্ত ভাতা নয়, তার শেষ চাওয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি। অন্তত তালিকায় নিজের নামটি লেখা দেখে মরতে চান রণাঙ্গনের এই সম্মুখযোদ্ধা। জানা যায়, উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের উজান খানমামুদপুর গ্রামের মৃত কলিমুদ্দিন শেখের ছোট ছেলে হাফিজুর রহমান চাঁদু। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে হাফিজুর রহমান চাঁদু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমি একজন অবহেলিত বীর মুক্তিযোদ্ধা। কত জায়গায় যুদ্ধ করেছি। সম্মুখযুদ্ধ করেছি নন্দনপুর, নাগডেমড়া, ডেমড়া কাইল্যান। আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন আনোয়ারুল, খালেক, বিজয়। সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান। আমি কেন পাই না? আমি ধুলাউড়িতে একবার পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়েছিলাম। পরে সুযোগ পেয়ে পালিয়ে বেঁচে ছিলাম। আমার সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত হয়ে সরকারের প্রদত্ত নানা সুবিধা ভোগ করছেন। তাদের ছেলেমেয়েরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাচ্ছে। অথচ আমি আর্থিক অনটনে পড়ে নিঃস্ব অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। আমি আপিল করেছি কিন্তু সেই আপিলে কেন আমাকে ডাকা হয় না? বয়স হয়েছে যেকোনো দিন মারা যাব। সরকারের কাছে আবেদন- মরার আগে অন্তত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নামটি দেখে যেতে চাই।' সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বলেন, 'যেহেতেু তিনি (হাফিজুর) সব সনদ নিয়ে আপিল করেছেন, এখানে আমার কোনো কিছু বলার নেই। আদালত যেটা করবে সেটাই।' মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন ধোপাদহ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল ইসলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'হাফিজুর রহমান চাঁদু একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। হাফিজুর যেন গেজেটভুক্ত হয় এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও সরকারের কাছে আমার দাবি।' ধোপাদহ গ্রামের অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় কুমারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি হাফিজুর রহামান চাঁদুর বিষয়ে বলেন, 'তিনি আমাদের রণাঙ্গনের সাথী।' তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা গেজেটপ্রাপ্ত হলো, অথচ চাঁদু হলেন না। প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আবেদন থাকবে হাফিজুর রহমান চাঁদু যেন গেজেটভুক্ত হয়।'