কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
নওগাঁর পত্নিতলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান -যাযাদি
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের বসবাসকারী আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব সংস্কৃতি। এদিকে আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার্থে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে আদিবাসী নেতারা দাবি জানিয়েছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে বর্তমানে উড়াও, সাঁওতাল, পাহান, মালো, মাহালী, মুন্ডা, মইশরসহ প্রায় ৫০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব সংস্কৃতি। অন্যভাবে বলতে গেলে এই আদিবাসীরাই প্রাচীন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। আদিবাসী সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারিভাবে ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাহিত্য সংস্কৃতিচর্চার জন্য নওগাঁর পত্নীতলায় কালচারাল একাডেমির নির্মাণকাজ শেষ হলেও অদ্যাবধি তা হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে এই এলাকার আদিবাসীদের সাহিত্য সংস্কৃতিচর্চার পুরো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসকারী আদিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। আদিবাসী নেতাদের তথ্য অনুযায়ী, পত্নীতলায় প্রায় ৫০ হাজার আদিবাসী বসবাস করে। সরকারিভাবে আদিবাসীদের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত করলেও সমতলের আদিবাসীরা এটি মানতে নারাজ। কারণ সমতল ভূমির হিন্দু ধর্মাবলম্বির বর্মণ সম্প্রদায়রাও এই নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। আদিবাসী নেতা সুধীর তির্কী অভিযোগ করে বলেন, নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী মধ্যে সমতল ভূমির হিন্দু ধর্মাবলম্বির বর্মণ সম্প্রদায়রাও এই নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে সুযোগ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায় বাধা প্রদান করেছে বলেও জানা গেছে। অন্যদিকে আদিবাসীদের মধ্যে যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, তারা নিজেরাই ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে মিশে যাচ্ছে মূল ধারার সঙ্গে। তারা অনেক সময় নিজেদের আদিবাসী বলে পরিচয় দিতেও সংকোচ বোধ করে। এ কারণে আদিবাসীদের সংস্কৃতি বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আদিবাসীরা কারাম পূজা, সহরাইপূজা, বাহা উৎসব, ফাগুয়া উৎসব পালন করে থাকে। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বি হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা পার্বন পালনে তাদের ইচ্ছা থাকলেও উচ্চ বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাধার মুখে তারা এসব আচার থেকেও বঞ্চিত হয়। আদিবাসীরা আগে তাদের নিজস্ব উৎসবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশন করতো। বর্তমানে আদিবাসীদের অভাব-অনটনের কারণে এই উৎসবগুলো তেমন পালন করা হয় না। এ ছাড়া অনেক স্থানে আদিবাসী পলস্নীর আশপাশে অ-আদিবাসীদের বসতি গড়ে উঠায় তারা আগের মতো স্বাধীনভাবে নিজেদের সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করতে পারছে না বলেও জানা গেছে। দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার্থে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে বলে এই এলাকার আদিবাসী নেতাদের দাবি।