কালনী-কুশিয়ারায় বিলীন হচ্ছে মাথা গোঁজার ঠাঁই

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে বিলীন হওয়ার মুখে বসতঘর -যাযাদি
ইশারায় নদীর পানি দেখিয়ে সামরিক মিয়া বললেন- 'ওইখানটাতে আমার বাড়ি ছিল। নদী ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। আর মাত্র আধাশতক বাকি, বাড়ির বাকি সবটা জায়গা গিলে খেয়েছে নদী।' ওই ব্যক্তি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নে কালনী- কুশিয়ারা নদীর ভাঙন কবলে পড়া সৌলরী গ্রামের বাসিন্দা। গত সোমবার সরেজমিন গেলে তিনি এ তথ্য জানান। সামরিক বলেন, 'যে আধাশতক জায়গা বাকি আছে, সেটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে নারী-শিশুসহ পরিবার নিয়ে আমি বাস্তুহারা হয়ে যাব।' সামরিক মিয়ার মতো নদীগর্ভে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে পার্শ্ববর্তী বদরপুর গ্রামের সুজিত, অভিনাস, অধীর, অশ্বীনি, দিপঙ্কর, মনোরঞ্জন, অরিবৃন্দ, নিলকান্ত, মতিন্ড, যামিনি, রমাকান্ত, গৌতম, সুশেন, লবু ও ভূষেনসহ আরও অন্তত ৩০ জনের পরিবার। এ ছাড়াও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আর চারটি গ্রামের হাজারও পরিবার কালনী-কুশিয়ারা নদী ভাঙনের শঙ্কায় দিনরাত পার করছে। এর মধ্যে শতাধিক পরিবার কাকাইলছেও ইউনিয়নের। সরেজমিন দেখা যায়, কালনী কুশিয়ারা নদীর ভাঙন প্রতিদিন বাড়ছে। কাকাইলছেও ইউনিয়নের মনিপুর, সৌলরী, কালনীপাড়া গ্রামের কয়েকটি বসতঘর যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বিপাকে পড়েছেন অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষগুলো। ভাঙনকবলিত অনেকে আত্মীয়স্বজন ও সরকারি পতিত ভূমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। সৌলরী গ্রামে নদী ভাঙনকবলিত রেখা রাণী সূত্রধর, বিষকা রাণী সূত্রধর ও নিরা মণি সূত্রধর জানান, তারা গত দুই বছর ধরে নদী ভাঙনের কবলে। একটু একটু করে পুরোটা বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ছায়া রাণী সূত্রধর বলেন, 'আমাদের অনেক বড় বাড়ি ছিল। দুই বছর ধরে নদী আমাদের বাড়ি ভেঙে শেষ করে দিয়েছে। গত কয়েকদিনে শেষ সম্বলটুকু নদী গিলে খেয়েছে। এখন আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।' কালা রবিদাস নামে আরেকজন বলেন, 'দুই বছর ধরে নদী আমাদের ভাঙতেছে। ভাঙতে ভাঙতে নিঃশ্বেষ করে দিচ্ছে। কার বাড়িতে গিয়ে উঠব, ভেবে পাচ্ছি না।' এদিকে, ২০২১ সালে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন থেকে সৌলরী গ্রাম রক্ষার জন্য ২০ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ ফেলা হয়। অস্থায়ীভাবে সেখানে নদী ভাঙন রোধে ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। বর্তমানে ব্যাগগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সৌলরী গ্রামের মজিবুর রহমান মিয়া ও সামরিক মিয়া বলেন, 'নদীগর্ভে আমাদের বসতঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জিও ব্যাগগুলোও পড়ে যাচ্ছে। আর কিছুদিন এভাবে থাকলে কয়েকটি গ্রাম নদী গিলে খাবে।' বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা শোভা রাণী সূত্রধর বলেন, 'আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে, পুত্রবধূ ও তাদের সন্তান নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছি। গত কয়েক বছরের ভাঙনে ভিটের এক তৃতীয়াংশ বিলীন হয়ে গেছে। এখনো ভাঙছে। এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।' এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, 'নদী ভাঙনের কবলে পড়া গ্রামগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করছি, বিপদকালীন একটা ব্যবস্থা হবে।'