শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

চিরিরবন্দরে পরিত্যক্ত রেলসেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

দিনাজপুর প্রতিনিধি
  ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে আত্রাই নদীর ওপর পরিত্যক্ত রেলসেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের পারাপার -যাযাদি

দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার কাউগাঁ এলাকায় আত্রাই নদীর ওপর প্রায় ১৮০ মিটার পরিত্যক্ত একটি রেলসেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেতুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে পাশেই একটি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নদীর দুই পাড়ের মানুষ পুরনো এই পরিত্যক্ত সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করছে। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছেন এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। সেতুর ওপর থেকে পড়ে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে এবং মৃতু্যর ঘটনাও রয়েছে একাধিক।

কাউগাঁ এলাকায় দিনাজপুর সদর উপজেলা ও চিরিরবন্দর উপজেলাকে বিভক্ত করেছে আত্রাই নদী। নদীর ওপর দিয়ে গেছে দিনাজপুর-ঢাকা রেলপথ। নদীর উভয়পাড়ে বড়গ্রাম, বড় বাউল, গলাহার, ভাদরা, মুন্সীপাড়া, বাবুর বাজার, নানিয়াটিকর, রামদেবপুর, গালতর, আরজি গলাহার, ঢাকাইয়াপাড়া গ্রামে প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোকের বাস। সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। ফলে শুধু মানুষ চলাচলই নয় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে এনে বিক্রির বিষয়েও ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০০ বছরের অধিক সময় ধরে এই রেলসেতুর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন তারা। রেলসেতুর সঙ্গে লাগোয়া একটি সাধারণ ব্রিজ করার জন্য একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। আশ্বাস পেলেও সেতু নির্মাণ হয়নি। কাউগাঁ মালার মোড় থেকে দিনাজপুর শহর মাত্র ৭ কিলোমিটার। অথচ ওই এলাকার মানুষকে চিকিৎসা কিংবা জরুরি প্রয়োজনে প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে শহরে আসতে হয়। ফলে সময় বাঁচাতে পরিত্যক্ত রেলসেতুটিই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১৮০ মিটার রেলসেতু। সদর উপজেলার মোহনপুর ও চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতারা এলাকায় রাবারড্যাম্প নির্মাণে আত্রাইয়ে পানিও কম নয়। পানি থেকে সেতুর উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। রেললাইনের মধ্যে স্স্নিপারের জায়গায় সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। মোটর সাইকেল ও সাইকেলের চাকা রেললাইনের ওপর রেখে ঢালাইয়ের ওপর দিয়ে পা টিপেটিপে হেঁটে পার হচ্ছেন মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, বাবুর বাজার এলাকায় তাদের বাড়ি। আগের দিন বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এসে সেতু পার হয়েছেন। মালার মোড়ে এসে ইজিবাইকে করে শহরে গিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়ি। আজ আবারও ইজিবাইকে মালার মোড় এসেছেন। এরপর পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, দীর্ঘবছর ধরে একটি সেতুর জন্য অপেক্ষা করছে এই এলাকার মানুষ। রেলসেতুটির ওপর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। কয়েকজনের মারা যাওয়ার ঘটনাও আছে। সর্বশেষ মাসচারেক আগে মোটর সাইকেল রেললাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে নিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে দুইজনের মৃতু্য হয়েছে। জরুরি কোনো রোগী হাসপাতালে নেওয়া যায় না। হাসপাতালে নিতে হলে পাঁচবাড়ি কিংবা খুনিয়ারদিঘী হয়ে কমপক্ষে ১২ কিলোমিটার বেশি রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। অথচ মালার মোড় থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মাত্র ৬ কিলোমিটার।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (৬০) বলেন, 'চিরিরবন্দর উপজেলার সাঁইতারা এলাকায় আত্রাই নদী হতে একটি শাখা বের হয়ে কাঁকড়া নদী নাম ধারণ করে সদর উপজেলার মোহনপুর একালায় রাবার ড্যামের সঙ্গে আবার আত্রাই নদীতে মিশেছে। মূলত এই এলাকাটা একটা দ্বীপের মতো। এতগুলো মানুষ কষ্ট করছি। ভোগান্তির শেষ নেই আমাদের। শাকসবজি চাষ করি। কোনো পাইকার আসে না এলাকায়। নিজেরাই সাইকেলে একটা করে বস্তা ব্রিজ পার করি। পরে অটোরিকশা করে বাজারে নিয়ে যাই।'

কাউগাঁ রেলসেতু সংলগ্ন সাধারণ সেতু নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে দিনাজপুরের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার বলেন, কাউগাঁও রেলসেতু সংলগ্ন সাধারণ সেতু নির্মাণে রেল কর্তৃপক্ষের কোনো পরিকল্পনা নেই। এ ধরনের সেতু নির্মাণে সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করে। তবে অবশ্যই রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে।

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, কাউগাঁ এলাকায় রেলসেতুর সঙ্গে লাগোয়া একটি সাধারণ সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা আছে। অনুমোদন পেলে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে