শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

নানা সংকটে পাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

পাবনা ও পাবিপ্রবি প্রতিনিধি
  ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
নানা সংকটে পাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

লাইব্রেরি হলো জ্ঞানের সম্ভার। যেখানে থরে থরে লাখ লাখ বই সাজানো থাকবে। আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি হবে অত্যন্ত আধুনিক মানের। অথচ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সমস্যার যেন শেষ নেই। পড়ার জন্য লাইব্রেরিতে গিয়ে মেলে না আসন, বুকসেলফেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা অনুযায়ী বই। এমনকি ইন্টারনেট সেবার উন্নতি হলেও সেটারও গতি কম। যেখানে পত্রিকা পড়ার জন্য টেবিল রাখা হয়েছে, সেখানে ফ্যানের কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে লাইব্রেরি ভবন নামে তিন তলাবিশিষ্ট একটি ভবন থাকলেও পুরো ভবনজুড়ে এর কার্যক্রম নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে আসন সংকটে। লাইব্রেরি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা মাত্র ১২০টি। অনেক শিক্ষার্থী বসতে না পেরে ফিরেও যাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শুধুমাত্র আসন সংকটই নয়, চাহিদা অনুযায়ী বইও পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া জানান, লাইব্রেরিতে পড়তে আসলে অনেকগুলো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আসন সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক সময় আসন খালি না পেলে চলে যেতে হয়। কাঙ্ক্ষিত বইটিও পাওয়া যায় না। আবার মোবাইল এবং ল্যাপটপ চার্জ করার জন্য পর্যাপ্ত চার্জিং পোর্ট নেই।

তিনি আরও বলেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি প্রায় রাত ১০টা নাগাদ খোলা থাকে। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও খোলা থাকে। তবে আমাদের লাইব্রেরি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। যেটা খুবই দুঃখজনক। শিক্ষার্থীরা যত বেশি সময় লাইব্রেরিতে থাকবে, ততই নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে, গবেষণায় ও জানার পরিধিও প্রসারিত হবে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে, লাইব্রেরির খোলা রাখার সময় যেন বাড়ানো হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরি ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা পুরোপুরি ব্যবহার করা হয় লাইব্রেরীর জন্য। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন সংকটের জন্য তৃতীয় তলায় রয়েছে ইংলিশ বিভাগের অফিস ও ক্লাসরুম, রসায়ন বিভাগের অফিস এবং ভার্চুয়াল কনফারেন্স রুম। এতে করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি পড়েছে জায়গা সংকটে।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সানোয়ার আলী মজুমদার বলেন, লাইব্রেরির ওয়াইফাই গতিশীল না। গ্রন্থাগারে এখন পড়ালেখার উপযুক্ত পরিবেশ হলেও জায়গা সংকট। তবে কিছু শিক্ষার্থীর কারণে পরিবেশ মাঝেমধ্যে নষ্ট হয়। যেমন কাপল যুগলের আড্ডা, বন্ধু বান্ধবের আড্ডা। পড়ালেখার চেয়ে তারা আড্ডা, গল্পই বেশি করে। আবার শিক্ষার্থীদের টয়লেট ব্যবস্থাও অনেক বাজে। দুটি টয়লেটের একটি অনেকদিন হলো বন্ধ ছিল।

আসন সংকট এবং বই সংকটের বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান হাফিজুর রহমান মোলস্না বলেন, 'বর্তমানে আমাদের একটি বড় সমস্যা আসন সংকট। আশা করছি, একাডেমিক ভবন ২ এর কাজ হয়ে গেলে এবং কিছু ডিপার্টমেন্ট ওই ভবনে চলে গেলে রুমের সংখ্যা বাড়িয়ে লাইব্রেরিটা সুন্দর করে সাজাতে পারব। আর পরীক্ষার আগে বই সংকট নিয়ে সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। এর সমাধানে আমরা একটা ডাটাবেস তৈরির কাজ করছি। শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরির কম্পিউটারে বই বা লেখকের নাম সার্চ দিয়ে উপযুক্ত বইটা খুব সহজে খুঁজে পাবে।'

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে লোকবল সংকটই প্রধান বাধা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, যেখানে আমাদের ২৫ এর বেশি জনবল প্রয়োজন, সেখানে আছে মাত্র ১৪ জন। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করা একটু কষ্টকর। পুরো লাইব্রেরি পুনরায় সাজানো হবে কিছু দিনের মধ্যে কাজ চলছে। টয়লেটের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যে সেটার ও কাজ চলছে।

উলেস্নখ্য, বর্তমানে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে একাডেমিক বই, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বই এবং গল্প ও উপন্যাসসহ প্রায় পঁচিশ হাজার বই রয়েছে। আরও প্রায় ১০ হাজার বই আছে। কিন্তু লাইব্রেরি সংকটের কারণে রাখা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া রয়েছে ৩০০টি প্রিন্ট জার্নাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে