আজকের যায়যায়দিন

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের আতঙ্কে জমির ফসল ও গবাদিপশুর খাবার (ঘাস) সংগ্রহ করতে পারছেন না কৃষকরা। পদ্মা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বসবাস করা মানুষ রয়েছেন সাপ আতঙ্কে। একের পর এক বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিলছে উপজেলার চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুর সংলগ্ন জেগে ওঠা কাঞ্চনপুর ও ফরিদপুর সদর উপজেলার চরে সেলিমপুর এলাকার শতাধিক কৃষক জমি বরগা (বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে) চাষ করেন। সেলিমপুরের বেশিরভাগ জমি নদীগর্ভে বিলীন হলে কৃষকরা ওই চরে জমি চাষ শুরু করেন। ওই চরটিতে ভুট্টা, বাদাম, তিল, আমন ও আউশ ধানের আবাদ করা হয়। এখন ভুট্টা ঘরে তুলে তিল ও ধানের চাষ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে এক কৃষক তিল কেটে রাখেন। পরে দুপুরে আঁটি বাঁধা সেই তিল তুলতে গিয়ে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পান। পরে ভয়ে চলে যান শ্রমিকরা। গরুর ঘাস কাটতেও আসছেন না অনেকে।

এ ছাড়া কিছুদিন আগে আজিমনগর ইউনিয়নের পশ্চিমচরে আজ্জেম নামের এক কৃষক সাপকে কেটে দুইভাগ করেন। শিকারপুরে সাইদুল মোলস্না, রঘুনাথপুরের মুন্নু এবং লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের কাজিকান্দা গ্রামে আকিদুল রাসেল ভাইপার সাপ দেখে সেগুলো মেরে ফেলেন।

গত শনিবার সকালে সেলিমপুর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, কাঞ্চনপুর চরে বৃহস্পতিবার সকালে এক কৃষক তিল কেটে রাখেন। পরে দুপুরে আঁটি বাঁধা সেই তিল তুলতে গিয়ে তিলের মধ্যে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পান। পরে ভয়ে তিল রেখে চলে যান। তিনি দাবি করেন, এতো বড় চরে তিনি ছাড়া শনিবার আর কোনো কৃষক আসেননি।

শিকারপুর এলাকার সাইদুল মোলস্না জানান, তার জমির ধানের আঁটি গাড়িতে তোলার সময় এক শ্রমিক আঁটির নিচে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেলে সাইদুল মোলস্না লাঠি দিয়ে আঘাত করে সাপটিকে মেরে ফেলেন।

শ্রমিক আকিবুল জানান, ধান কাটার সময় সাপ দেখতে না পেলেও ধানের আঁটি ঘোড়ার গাড়িতে তোলার সময় ধানের আঁটির নিচে রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পান। তিনি জানতেন, এই সাপটি খুবই বিষধর। তাই তিনি ভয়ে চিৎকার দেন। পরে তার সঙ্গে থাকা অন্য শ্রমিকরা সাপটিকে মেরে ফেলে।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, 'আমার ইউনিয়নে গত মার্চে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে একজনের মৃতু্য হয়েছে। এ ছাড়া চরাঞ্চলের ফরিদপুর জেলা সংলগ্ন পদ্মার চর এলাকায় কয়েকজনকে রাসেল ভাইপার দংশন করে। তারা ফরিদপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। পাশের ইউনিয়নের বসন্তপুর এলাকায় একজন ও এনায়েতপুর এলাকায় আব্দুলস্নাহ নামের এক যুবককে রাসেল ভাইপার সাপ দংশন করে। একজনের দংশনের জায়গা পঁচেও গেছে। আমার চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়ন, সুতালড়ি ও আমার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পদ্মা পাড়ের লোকজন আতঙ্কে রয়েছে। কৃষকরাও আতঙ্কে। আমি বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় পরে গেছি।'

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, হরিরামপুরের চরাঞ্চলে কৃষকদের ধান কাটার সময় সতর্কতার সঙ্গে ধান কাটতে হবে।

হরিরামপুর ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, 'সম্প্রতি রাসেল ভাইপারের মতো বিষধর সাপের কামড়ে চরাঞ্চলে কয়েকজন মারা গেছে। বিষয়টা আমরা অবগত। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি। উপজেলা পরিষদ থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলে কৃষকদের বিশেষ জুতার (গামবুট) ব্যবস্থা করব।'