নবীগঞ্জ আওয়ামী লীগে নতুন হাওয়া

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃতু্যর পরও সুরক্ষিত ছিল ঘাঁটি। ২০১৮ থেকে দুর্গের চেইন অব কমান্ড ভেঙে যায়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলের পরই তৈরি হয় গাজী বিরোধী বলয়। কাউন্সিলে বিপুল ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে বিজয়ী হন ইমদাদুর রহমান মুকুল। সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিককে পরাজিত করেন সাইফুল জাহান চৌধুরী। মুকুল দাবিকৃত ষড়যন্ত্র তথ্যে ২০২১ সালে বহিষ্কার হলেও এমপি মিলাদ দূরত্বে ২০২২ সালের ২১ শে জুন সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাইফুল জাহান চৌধুরী। ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে গিয়াস উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট গতি গোবিন্দ দাসকে পদায়ন করা হয়। বহিষ্কার, অব্যাহতি নাটকীয়তায় সভাপতি এবং সম্পাদকীয় পদে পরিবর্তন হলেও অন্য নেতারা বহালতবিয়তে রয়েছেন। সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগেও একই অবস্থা। গাজী, মুশফিক বলয়ের পর আরেকটি বলয় সৃষ্টি হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। এবার নতুন করে আবির্ভূত হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল ও অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত হলেও মাঠে ঝড় তোলেন দুই নেতা। একে আওয়ামী লীগের নতুন হাওয়া হিসেবে অভিহিত করেন তৃণমূল নেতারা। এ ছাড়া নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গতি গোবিন্দ দাশকে দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ী হন সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রাচীন বিদ্যাপীট জেকে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রয়াত আব্দুল মতিন চৌধুরীর ছেলে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম উন্নয়নশীল জনপদ হিসেবে পরিচিত নবীগঞ্জ। জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রক উপজেলা এখন নিয়ন্ত্রণহীন। কেন্দ্রের নির্দেশনায় বঞ্চিত হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। দেওয়ান ফরিদ গাজীর পরই সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচিত মুখ তিনি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ কারণে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সংসদে নির্বাচনে হাটে-মাঠে চষে বেড়ান। প্রতীক বরাদ্দের মুহূর্তে তাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও জাপার সমঝোতায় সমর্থন পেয়ে যান কেন্দ্রীয় জাপার ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে হতাশা দেখা দেয়। দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে মাঠ থেকে সরে যান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নির্বাহী সদস্য ডা. মুশফিক চৌধুরী। এ সুযোগে সরকারবিরোধী ও ক্ষমতাসীন বলয়ের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে চমক দেখান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্রপ্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। ওদিকে, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশায় সদ্য শূন্য হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির এমপির সঙ্গে মতানৈক্য দেখা দেয়। আলমগীরের বিপরীতে প্রার্থী হন এমপি আবু জাহিরের সহধর্মিণী আলেয়া জাহির। স্বল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন আলেয়া জাহির। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-০১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) এলাকায় প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। আলেয়া জাহির নির্বাচনী এলাকা বাহুবলের বাসিন্দা। এ ছাড়া সদ্য উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া জেলা আওয়ামী লীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের সমর্থনেও তৃণমূলে বলয় তৈরি হয়েছে। এ যেন পুরনো ধারার বিপরীতে নতুন বলয়ের আওয়ামী লীগ। সহযোগী সংগঠনেও একই অবস্থা। এক সময় শহর জনপদে দাপুটে যুবলীগ ও ছাত্রলীগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ছাত্রলীগের গ্রম্নপিংয়ে খুন হয় উদীয়মান তরুণ হেভেন চৌধুরী। ২০১৫ সালে রাজপথে নৃশংসতার শিকার হন তিনি। এ ঘটনার পরই তছনছ ছাত্রলীগ। খুনের ঘটনায় হাবিবুর রহমান হাবিবের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়। হত্যা মামলায় হাবিব দীর্ঘ কারাভোগ শেষে যুবলীগে প্রবেশ করেন। কয়েক বছর নিস্তেজ থাকার পর ফয়ছল তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত ছাত্রলীগ প্রাণ ফিরে পায়। ফয়ছল নেতৃত্ব ত্যাগের পর পাল্টাপাল্টি কমিটি নিয়ে আবারও মুখোমুখি ছাত্রলীগ। হাফডজন সংঘাত সংঘর্ষে ফের কমিটি বিলুপ্ত। একই অবস্থা যুবলীগে। সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের নেতৃত্বাধীন যুবলীগ ছিল শক্তিশালী। দলীয় সিদ্ধান্তের বিপরীতে ২০১৬ সালে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কার হন তিনি। এরপর থেকেই ছন্নছাড়া যুবলীগ। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহনওয়াজ মিলাদ সংগঠনিক কাটামো তৈরিতে ব্যর্থ হন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দূরত্ব ছিল দৃশ্যমান। এ নিয়ে কেন্দ্রের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিতেও সরব কেন্দ্রীয় যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এমএ মুকিত চৌধুরী বলেন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। গণসংগঠন সুগঠিত না হলে সহযোগী সংগঠনের ভারসাম্য রক্ষা একটু কঠিন হয়ে যায়। অচিরেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন সংগঠিত ও সুদৃঢ় হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সার্বিক বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, বৃহৎ দল মতানৈক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। ঐক্য না থাকায় এবং দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে প্রথমবার উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন বিএনপি নেতা।