কালিয়াকৈরে অনৈতিক পন্থায় কোরবানির পশু প্রস্তুত

মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় অনৈতিক পন্থায় কোরবানি পশু প্রস্তুত করছেন স্থায়ী ও অস্থায়ী খামারিরা। এ ধরনের পশুর মাংস খেলে মানুষের নানা ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রতি বছর কোরবানিদাতা বৃদ্ধি ও পালনকারী কমে যাওয়ার কারণে এবার কোরবানির পশু ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। এবার ঘাটতি পূরণে অন্য জেলা-উপজেলার ওপরই ভরসা। সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৪ সালের পর থেকে বিদেশ থেকে গরু আমদানি বন্ধ রয়েছে। দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। সে সুবাদে কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ৩৫৭টি স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর খামার রয়েছে। এখানে এবার কোরবানি পশুর চাহিদা ২৯ হাজার। এসব গবাদিপশুকে ঘাসজাতীয় স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম। কিন্তু কতিপয় অসৎ অর্থলোভী খামারি গরুকে দ্রম্নত মোটাতাজা করতে স্বাভাবিক খাদ্যের সঙ্গে অধিকমাত্রার কৃত্রিম খাবার খাওয়াচ্ছেন। গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির খাবার ও তুলাও। এক্ষেত্রে ভিটামিন, স্টেরয়েড, আয়রণ-জাতীয় ওষুধ, ব্রয়লার, পোলট্রি ফিড, ইউরিয়া সার মিশ্রিত খড় খাওয়ানো ছাড়াও ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন প্রয়োগ করছে। এসব খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ ফার্মেসি থেকে শুরু করে হাটবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, অনৈতিক পন্থায় পশু মোটাতাজাকরণ করলেও এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। কিন্তু পশু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গবাদিপশুর ওষুধ উৎপাদনে ভেটেরিনারি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি গড়ে উঠেছে। দ্রম্নত সময়ে অধিক লাভের আশায় মানবদেহের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে ঝুঁকছে। এই তালিকায় নামিদামি কোম্পানির নামও রয়েছে। আর বেশি দামের আশায় কম সময় ও স্বল্প বিনিয়োগে অনেকে গরু-মহিষ মোটাতাজাকরণে এ অনৈতিক পন্থা বেছে নিচ্ছেন খামারিরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ধরনের গরুর মাংস খেয়ে মানুষের নানা ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। মানুষের শরীরে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া ছাড়াও জটিল রোগের আশঙ্কাও রয়েছে। তারপরও এ উপজেলায় ২৯ হাজার পশুর চাহিদা থাকলেও প্রস্তুত হয়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৬৬১টি। এগুলো হচ্ছে- ষাঁড় ৬ হাজার ৫১৩টি, বলদ ২১০টি, গাভি-বকনা ১ হাজার ২০টি, মহিষ ১২৫টি, ছাগল ১০ হাজার ৫৩৬টি ও ভেড়া ২৫৭টি। অনৈতিক পন্থায় কোরবানি পশু প্রস্তুতেও এবার ঘাটতি রয়েছে ১০ হাজার ৩৩৯টি। প্রতি বছর কোরবানিদাতা বৃদ্ধি ও পালনকারী কমে যাওয়ায় ঘাটতি থাকে পশুরও। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অন্য জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পশু এনে এখানকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। পাশাপাশি পাশের জেলা-উপজেলাগুলো থেকে পশু এনে এই ঘাটতি পূরণ করা হবে। নাজিম অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, 'প্রাণিসম্পদ অফিসের তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। বড় কোনো সমস্যা হলে তখন সরকারি চিকিৎসকরা ফোন দিলে এলেও ঠিকমতো চিকিৎসা দেন না।' আরেক খামার মালিক কামরুজ্জামান জানান, 'সরকারি পশু চিকিৎসকরা আমাদের কোনো সহযোগিতা করেন না। তারা যদি সহযোগিতা করতেন তাহলে খামার মালিকরা আরও লাভবান হতেন। অনেক সময় সমস্যায় পড়লে ফোন দিলে তারা ধরেন না। ফলে আমরা খামারিরা অধিক পশু উৎপাদনে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।' অনৈতিক পন্থায় পশু প্রস্তুত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান জানান, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যা তুলা খাওয়ানো। বিষয়টি নজরে আছে, ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়া এখানে এ বছর কোরবানির পশুর ঘাটতি আছে। তবে পাশের জেলা-উপজেলায় চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। সেখান থেকে এনে পশুর চাহিদা পূরণ করা হবে। সব মিলিয়ে আমরা মনে করছি, পশু ঘাটতি খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে আমরা খামারের মালিদের পশুর ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি