তিন বছরেও মেরামত হয়নি মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ!

মেরামত কাজে বিএসএফের বাধা মারাত্মক ঝুঁকিতে ১৫শ' মিটার এলাকা উৎকণ্ঠায় তীরবর্তী বাসিন্দারা

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শরীফপুরে মনু নদীর বাঁধ মেরামতের কাজ না হওয়ায় এভাবেই লোকালয়ে ঢুকছে ঢলের পানি -যাযাদি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় মনু নদীর প্রায় দেড় হাজার মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধের মেরামত কাজ গত তিন বছরেও সম্পন্ন হয়নি। ভারতীয় বিএসএফ'র বাধার কারণে ওই কাজটি সম্পন্ন হয়নি বলে জানায় পাউবো। যার ফলে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা উৎকণ্ঠায় দিন-রাত কাটাচ্ছেন। হুমকির মুখে রয়েছে চাতলাপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটিও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মনু নদীর ভাঙন থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলাকে রক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ মেরামতের প্রকল্প গ্রহণ করে যৌথ নদী কমিশন। এর আলোকে ২০২১ সালে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করে। কিন্তু শরীফপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজ করতে গেলে ভারতীয় বিএসএফ বাধা দেয়। তাদের বাঁধার কারণেই গত তিন বছর থেকে এ কাজ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা মনু নদীর কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর সীমান্তে প্রতিরক্ষা বাঁধের তিনটি পয়েন্টে প্রায় দেড় হাজার মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের এ অংশটি অনেক আগেই নদীর সঙ্গে প্রায় মিশে গেছে। বাঁধ মেরামতের কাজের কথা ভারতকে জানানো হলেও দীর্ঘদিন কোনো সাড়া মেলেনি। ২০২৩ সালের আগস্টে যৌথ নদী কমিশনের কাছে এ কাজের অনুমতি চেয়ে ডিও চিঠি পাঠানো হয়। তাতেও ভারত পক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং এ স্থানগুলো তাদের অংশে পড়েছে বলে ভারতীয় পক্ষ দাবি করেছে। এতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন সীমান্তে নদী ভাঙন প্রতিরোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ওই এলাকায় বাঁধ মেরামত না হওয়ায় সহজেই বর্ষার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ইউনিয়নের মানুষ বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে থেকেই বন্যা-আতঙ্কে থাকেন। কারণ, ২০১৮ সালে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বাঁধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। ওই সময় পুরো ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। ভেঙে চুড়মার হয়ে গিয়েছিল চাতলাপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট যাতায়াতের সড়কটি। ওই আতঙ্ক এখনো মানুষের মন থেকে যায়নি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, গত এপ্রিল মাসে পাউবো তত্ত্বাবধায়কের নেতৃত্বে একটি টিম সীমান্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। গত বছর যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে কাজ শুরুর আবেদন করা হয়। কিন্তু অন্যপক্ষের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর আরও কয়েকবার আবেদন করা হয়। সম্প্রতি যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে মনু নদীর ভারত অংশে ভাঙনের ৫টি স্থানে বাংলাদেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ওই স্থানগুলো দেখার জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে বিজিবির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিএসএফ স্থানগুলো দেখার অনুমতি দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।