শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

নীলফামারীতে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

পীরগঞ্জে মাটিতে শুয়ে পড়েছে ফসলের ক্ষেত
স্বদেশ ডেস্ক
  ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০
নীলফামারীতে কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

নীলফামারীতে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালাসহ অসংখ্য কাঁচা, আধাপাকা ঘর এবং দোকানপাট ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। এ ঝড় প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী হয়। এতে সৈয়দপুর ও ডিমলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ঝড়-বৃষ্টিতে ভুট্টা, ধান ক্ষেত, ফলের গাছসহ বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরে আকস্মিক ঝড়ে শহরের সাহেবপাড়া, বাঁশাবড়ি আমিন মোড় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদু্যৎ সংযোগ।

ঘুরে দেখা গেছে, শহরের আমিন মোড় এলাকায় শতবর্ষী একটি গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়ায় আশপাশের কয়েকটি দোকান, হোটেল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের এলাকা ও বিভিন্ন মহলস্নাতেও গাছপালা ভেঙে যায় ও উপড়ে পড়ে। উড়ে ভেঙে যায় বাড়ি-ঘরের টিন। তার ছিঁড়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতির কার্যালয়, ভাই ভাই গার্মেন্টস, স্থানীয় হোটেল ও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি বাড়ির মালিকরা জানান, 'রাতে আকস্মিক ঝড়ে শতবর্ষী একটি বিশাল গাছ উপড়ে পড়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য শেষ, বাড়িও ভেঙে গেছে আমাদের।'

এ ছাড়া ঝড়ে উপজেলার কামারপুকুর, বাঙালিপুর, খাতামধুপুর, কাশিরাম বেলপুকুর ও বোতলাগাড়ি ইউনিয়নে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, বুধবার রাত পৌনে ২টা থেকে রাত ২টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত বয়ে যাওয়া এ কালবৈশাখী ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই আলম সিদ্দিক বলেন, 'আকস্মিক ঝড়ের কারণে সৈয়দপুর উপজেলায় বিভিন্ন পাড়া-মহলস্নায় গাছপালা, কাঁচা ঘরবাড়ি ও উঠতি ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের চেষ্টা করছি।'

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, ডিমলায় হঠাৎ ঝড়ে একটি ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান সরকার কেঞ্জুল বলেন, বৃহস্পতিবার হঠাৎ খালিশা চাপানী এলাকার কাকিনা বাজার, ছোটখাতা, বাইশপুকুর এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ে গাছচাপা পড়ে আহত হয়েছেন প্রায় দশজন। বৈদু্যতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে, ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে অনেক আধাপাকা ও টিনশেডসহ তিন শতাধিক ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, নাউতারা ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ঝড়ে ঘরবাড়ি বিধ্বস্তের খবর পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নে কাজ চলছে।

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ঝড়-বৃষ্টিতে ভুট্টা, ধান ক্ষেত, ফলের গাছসহ বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে মাটিতে শুয়ে পড়েছে ফসলের ক্ষেত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গণিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৭০টিরও বেশি পরিবারের ঘরবাড়ি। উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা দিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর নামের তালিকা তৈরি করছে। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে এই ক্ষয়ক্ষতির বেশি হয়েছে।

সরেজমিনে গণিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে বিদ্যালয়টির চারটি শ্রেণিকক্ষের টিনের চাল দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে। ভেতরে ক্লাসের বেঞ্চগুলোও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্লাসের এমন দশায় পাঠদান নিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। ক্লাস করতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান বলেন, 'আমাদের বিদ্যালয়ে আর্থিক কোনো ফান্ড নেই। বিদ্যালয়টি মেরামতে সরকারি সহায়তা না পেলে আমরা দ্রম্নত এই ক্লাসরুমগুলো মেরামত করতে পারব না। তাই আমি আকুলভাবে সরকারি সহায়তার আবেদন করছি।'

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'ঝড়ে জাবরহাট ইউনিয়নের ৬০টি পরিবারের ঘরবাড়ি, কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের ১০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও পলস্নীবিদু্যৎ সমিতির পীরগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম বাচ্চু মিয়া বলেন, 'ঝড়ের কারণে পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি বৈদু্যতিক খুঁটি, ৬টি বৈদু্যতিক ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যতদ্রম্নত সম্ভব বিদু্যৎ সরবরাহ পুরোপুরি চালু করতে কাজ চলছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে