শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
ঘূর্ণিঝড় রেমাল

সাতক্ষীরায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

চরম ঝুঁকিতে নদীবেষ্ঠিত ব-দ্বীপ গাবুরার মানুষ
শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা
  ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সাতক্ষীরায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ -যাযাদি

বঙ্গপোসাগরের সৃষ্ট সর্ববৃহৎ প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদে ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-১ ও ২ এর অধীনে ২০টি পয়েন্টে এসব বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীবেষ্টিত সুন্দরবন সংলগ্ন ব-দ্বীপ অঞ্চল গাবুরা ইউনিয়নের সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ক্ষতি ও নতুন করে ফাটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার বসবাসরত ৪৩ হাজার মানুষ।

এছাড়া আশাশুনির উপজেলার প্রতাপনগর, বিছট, অনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নের পশ্চিম খাজরা রাজবংশী পাড়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী জরাজীর্ণ বাঁধ নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতির খানজিয়া, দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এলাকায় ব্যাপক ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে নদীর প্রবল জোয়ারে ভাঙনের ভয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ও সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগে উপকূলে আঘাত আনে।

আর তা স্থায়িত্ব হয় অনন্ত ৩০ থেকে প্রায় ৪০ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে তিন থেকে চারটি জোয়ার ভাটায় সুন্দরবন সংলগ্ন কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, চুনাসহ সব নদ নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। ঝড়ো বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষীপ্রতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধে বার বার জোয়ারের পানি আছড়ে পড়তে থাকে। ফলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের-১ ও ২ এর আওতাধীন মোট ৬৮০ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের ১৫ কিলোমিটার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

স্থানভেদে ২০টি ফাটল ও ভাঙনকবলিত পয়েন্টের মধ্যে গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, পাশ্বেমারি, হরিষখালী, গাবুরা বাদার ও ৯ নম্বর সুরা অঞ্চলের বাঁধে বেশি ক্ষতি হয়। যেখানে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ২৯ কিলোমিটার গাবুরা ইউনিয়নের টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। গত ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের ২৫ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি যেভাবে বেড়িবাঁধে আছড়ে পড়েছিল। তাতে বাঁধ ভেঙে এই নদীবেষ্ঠিত ব-দ্বীপ অঞ্চল গাবুরা ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে পানিতে পস্নাবিত হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলাকাবাসীর সমন্বয়ে দলগত প্রচেষ্টায় অরক্ষিত বাঁধ ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পায়। ঝুঁকিপূর্ণ ফাটল ও ভাঙনকবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ও গাছের ডাল পুঁতে বাঁধ রক্ষা করা হয়।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, পাওবো ১ ও ২ এর আওতায় ৬৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ২০টি পয়েন্টে মোট ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এসব এলাকায় জিওব্যাগ ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী দিয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল জোয়ার থেকে বাঁধ সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করা সম্ভব হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ও ফাটলকবলিত এলাকা চিহ্নিত করে তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে