উত্তরাঞ্চলে কালবৈশাখীর তান্ডব

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
আকস্মিক কালবৈশাখীতে দিনাজপুরে সড়কের পাশে উপড়ে পড়ে থাকা গাছ -যাযাদি
দিনাজপুর, নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরের জেলাগুলোতে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে কালবৈশাখী। বুধবার মধ্যরাতের এ ঝড়ে ঘরবাড়িসহ গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিভিন্ন এলাকা। ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর- দিনাজপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরে গত মধ্যরাতে আকস্মিক কালবৈশাখীর আঘাতে গাছপালাসহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রয়েছে বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন। বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, বুধবার দিনগত রাত ১টা ৪১ মিনিট থেকে ১টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী এই কালবৈশাখীর গতিবেগ ছিল ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। ঝড়ে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় দিনাজপুর-বোচাগঞ্জ ও দিনাজপুর-কাহারোল উপজেলা সড়কের পাশে গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শহরে ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে থাকা গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া বিজিবি দিনাজপুর সেক্টর সদর দপ্তরে থাকা ব্যাপক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এদিকে ঝড়ে বিদু্যতের খুঁটি পড়ে এবং গাছ ভেঙে বৈদু্যতিক তার ছিঁড়ে পড়ায় বর্তমানে দিনাজপুরে বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দিনাজপুর পিডিবি কর্তৃপক্ষ বলেছে কালবৈশাখীতে শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদু্যতের সচল রাখার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রম্নত বিদু্যৎ সংযোগ চালু হবে। এদিকে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, আকস্মিক ঝড়ের কারণে দিনাজপুর শহরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় গাছপালা কাঁচা ঘরবাড়ি ও উঠতি ফসলের বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরে বুধবার রাত পৌনে ২টার দিকে শুরু হওয়া আকস্মিক ঝড়ে প্রচুর গাছপালাসহ অসংখ্য কাঁচা ও আধা-পাকা বাড়িঘর এবং দোকানপাট ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিদু্যৎ সংযোগ। এ ঝড় প্রায় ১৫-২০ মিনিট স্থায়ী হয়। শহর ঘুরে দেখা গেছে, শহরের মধ্যে সাহেবপাড়া, বাঁশাবড়ি আমিন মোড় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমিন মোড় এলাকায় শতবর্ষের পুরোনো বিরাট একটি গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়ায় আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান, হোটেল ও বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকা ও বিভিন্ন মহলস্নাতেও গাছ-পালা ভেঙে যায় ও উপড়ে পড়ে। উড়ে ভেঙে যায় বাড়ি-ঘরের টিন। তার ছিঁড়ে বিভিন্ন এলাকায় বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, বুধবার রাত পৌনে ২টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত বয়ে যাওয়া এ কাল ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। ঝড়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে গাছ ও বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ঝড়ে উপজেলার কামারপুকুর, বাঙালিপুর, খাতামধুপুর, কাশিরাম বেলপুকুর ও বোতলাগাড়ি ইউনিয়নে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গাছ-পালা উপড়ে পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৈয়দপুর ইউএনও নূর ই আলম সিদ্দিক বলেন, এখনও কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের চেষ্টা করছি।' পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় ঝড়-বৃষ্টিতে ভুট্টা, ধান ক্ষেত, ফলের গাছসহ বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে মাটিতে শুয়ে পড়েছে ফসলের ক্ষেত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গণিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৭০টিরও বেশি পরিবারের ঘরবাড়ি। উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা দিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর নামের তালিকা তৈরি করছে। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। সরেজমিনে গণিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে বিদ্যালয়টির চারটি শ্রেণিকক্ষের টিনের চাল দুমড়ে মুচড়ে যায়। ভেতরে ক্লাসের ব্রেঞ্চগুলোও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান বলেন, 'আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো ফান্ড নেই। সরকারি সহায়তা না পেলে আমরা দ্রম্নত ক্লাসরুমগুলো মেরামত করতে পারব না। তাই সরকারি সহায়তার আবেদন করছি।' উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঝড়ে জাবরহাট ইউনিয়নের ৬০ পরিবারের ঘর-বাড়ি, কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ১০টি পরিবারের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পলস্নী বিদু্যত সমিতির পীরগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম বাচ্চু মিয়া বলেন, ঝড়ের কারণে ১২টি বৈদু্যতিক খুঁটি, ৬টি বৈদু্যতিক ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আরও খোঁজ নিচ্ছি, দেখছি। যত দ্রম্নত সম্ভব বিদু্যৎ সরবরাহ পুরোপুরি চালু করতে কাজ চলছে।