রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের হল সম্মেলন সর্বেশষ অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ২৪ মার্চ। দীর্ঘ সাত বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক বছর মেয়াদি ওই কমিটি এখনো বহাল রয়েছে। তবে এসব হলের ৩৪ জন মূল নেতার (সভাপতি-সম্পাদক) মধ্যে সাংগঠনিক কাজে মাত্র পাঁচজন সক্রিয় রয়েছেন। এদের মধ্যে আবার অধিকাংশই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। আর পাঁচ নেতা করেছেন বিয়ে।
সংগঠনের নেতাকর্মী বলছেন, হল কমিটি না থাকায় ছাত্রলীগে নতুনভাবে কর্মী তৈরি হচ্ছে না। যারা সক্রিয় ছিলেন তারাও হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে কমিটি দিয়ে সংগঠনকে চাঙ্গা করার দাবি জানাচ্ছেন হলে অবস্থান করা নেতাকর্মী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার্থে একটি হল পরিচালনা করার জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হল শাখা ছাত্রলীগের ৩৪ জন মূল নেতার মধ্যে অনেকেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। ৫ নেতা বিয়ে করছেন, কেউ সরকারি চাকরি করছেন, কেউবা ক্যাম্পাসে থেকেও বর্তমান রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এ ছাড়া গত কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষের ঘটনায় হল শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল, সাধারণ সম্পাদক মো. স্বাধীন খান, মতিহার হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাজীব হোসেন, শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রামীম আহম্মেদ, সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ কামাল বিন হারুন সিয়াম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুলস্নাহ আল মারুফ, নবাব আব্দুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্রদেব ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক মো. শামিম হোসেন, শহীদ ড. শামসুজ্জোহা হল ছাত্রলীগের সভাপতি চিরন্তন চন্দ, সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম, জিয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাশেদ আলী, মাদার বখ্শ হল ছাত্রলীগের সভাপতি হামীম রেজা শাফায়েত, সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান রাথিক, শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোমিনুল ইসলাম মোমিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
এ ছাড়া নিষ্ক্রিয় রয়েছেন- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাজরীন আহমেদ খান মেধা, সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি বালা, মন্নুজান হল ছাত্রলীগের সভাপতি আন্নাতুল নাইমা আকন্দ জানা, রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি নুসরাত আহান আভা, তাপসী রাবেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাসনিম নাহার তৃণা, সাধারণ সম্পাদক তাসনুভা মেহজাবিন মিম, রহমতুন্নেসা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিনথিয়া নাসরিন মিম, খালেদা জিয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি প্রিয়াঙ্কা সেন মৌ, সাধারণ সম্পাদক আজমিনা বিনতে ইসলাম শ্রেয়া।
এদিকে, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নিয়াজ মোর্শেদ শুভ, হবিবুর হলের সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান অপু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. কাব্বিরুজ্জামান রুহল ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস ও শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. তাজবীউল হাসান অপূর্ব ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়।
আর মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সাধারণ মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মন্নুজান হলের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার শশী, রহমতুন্নেসা হল ছাত্রলীগের সভাপতি মোসা. তামান্না আকতার তন্বী, রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক আলফি শারিন আরিয়ানা সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন। এ চার নেতার মধ্যে ভাস্কর শাহা ও তামান্না আকতার তন্বী শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদ পেয়ে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি করছেন।
হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক না থাকায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে দুজনকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তারাই এখন হল পরিচালনা করছেন। তবে হলে অবস্থান করা নেতাকর্মীর দাবি, দ্রম্নত সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে হল কমিটি ঘোষণা হোক।
হল সম্মেলনের দাবি জানিয়ে জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ বলেন, 'হল সম্মেলন এখন আমাদের সময়ের দাবি। কমিটির মাধ্যমে হল শাখা ছাত্রলীগের ইউনিটগুলো শক্তিশালী হয় এবং সংগঠনে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুলস্না-হিল-গালিব বলেন, 'আমি ও আমার সভাপতি দায়িত্বে আসার আগে থেকেই হল কমিটি নেই। ১৭ হলের ৩৪ মূল নেতার মধ্যে গুটিকয়েক নেতা ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও অধিকাংশই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। অনেকেই চাকরি নিয়ে বিয়ে-শাদিও করেছেন। এ ছাড়া অনেক নেতার পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ায় রাজশাহী থেকে চলে গেছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর হল শাখা ছাত্রলীগকে গতিশীল করার জন্য প্রতিটি হলে দুইজনকে দায়িত্ব দেই। যেসব হলের সভাপতি-সম্পাদক আছে, সেই সব হলগুলোয় তাদের মনোনীত নেতাকর্মীকে হলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদককে জানিয়ে রাবি ছাত্রলীগকে গতিশীল করার লক্ষ্যে দ্রম্নতই আমরা বর্তমান হল কমিটি বিলুপ্ত করব এবং হল সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেব।'
রাবি শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম শাকিল বলেন, 'সর্বশেষ জয় ও লেখক ভাই হল সম্মেলন দিয়েছিলেন। আমরা সাদ্দাম ও ইনান ভাইয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে খুব দ্রম্নতই হল সম্মেলনের আয়োজন করব।'