ফটিকছড়িতে জমজমাট সবচেয়ে বড় বাগানবাজার পশুর হাট
প্রকাশ | ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পশুর হাট এখন জমজমাট। প্রচুর গরু উঠছে বাজারে। দেশীয় গরুতে চাহিদা বেশি ক্রেতাদের।
বাগানবাজার ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ১ নং বাগানবাজার ইউনিয়নে বাগানবাজারে অবস্থিত উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট। এটি ভারত সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ধারে অবস্থিত বাগানবাজার পশুর হাট নামে পরিচিত। একদিকে ভারত অন্যদিকে রামগড় এ দুইয়ের মধ্যে ফটিকছড়ির সীমানায় অবস্থিত ফটিকছড়ির সর্ববৃহৎ এ পশুর হাটটি।
প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তায় সারি সারি গরু। এ বাজারে নানা বয়েসি মানুষের আনাগোনা। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বেপারী ও খরিদ্দারদের সংকোচহীন দরাদরি, অনবরত পশুর ডাক। হাটের পাশ দিয়ে ট্রাক-পিকাপভ্যান-নছিমন-করিমনের বড় বড় গাড়ির সারি অপেক্ষায় গরু নেওয়ার জন্য। হাটজুড়ে গমগম আওয়াজ ফটিকছড়ির বাগানবাজার পশুর হাটের চিত্র এটি। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে হাট শুরু হয় দশটা-এগারোটায় হাট থাকে পুরো জমজমাট। রাত ৮টার ভেতর হাট ভেঙে যায়।
গ্রামের প্রান্তিক চাষি বা খামারিরা বাছুর কিনে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করে হাটে বিক্রি করতে আসেন। অনেকসময় খামারিদের বাড়ি থেকে বেপারীরা গবাদিপশু কিনে আনেন। ছোট বেপারীদের কাছ থেকে সেগুলো বড় বেপারীরা কিনে নেন।
গত শুক্রবার হাটের দিন সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা ও উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভিড়। এদিন প্রায় চার হাজারের অধিক গরু বাজারে উঠেছিল। এক হাজারের বেশি গরু বিক্রি হয় শুক্রবারের বাজারে। গরু উঠানামায়ও কোন খরচ নেই। কত কেজি গরু তা আধুনিক মেশিনে মেপে নেওয়ার সুব্যবস্থাও রয়েছে এ বাজারে।
সুযোগ সুবিধা বেশি এবং গ্রামের গরু এ হাটে বেশি বলে চট্টগ্রাম শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিলস্না, বগুড়ার প্রচুর ব্যবসায়ী এ বাজারে গরু কিনতে আসেন। দূরবর্তী ব্যবসায়ী গরু নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা পোহাতে রয়েছে ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাও। বাজারের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইজারাদার আমজাদ হোসাইন সরকার জানান, 'ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাজার এখন আগের চেয়ে বেশি জমে উঠেছে। বাজারের শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা পুরো বাজার তদারকি করি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ক্রেতা বিক্রেতাদের শতভাগ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাতের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ গরু-ছাগলের বাজারে। অন্য বাজারের চাইতে এ বাজারে পশুর দাম কম।'
ঐতিহ্যবাহী এ বাজারের বিশেষত্ব হল এখানে ছোট, বড়, মাঝারি যেমন প্রয়োজন ক্রেতার পছন্দসই গরু এখান থেকে কিনে নিতে পারে।
বিগত বছর ধরে বেচাকেনা করেন বেপারী ওইচ্চিকু মারমা। তিনি জানান, সারা বছর গরু বেচাকেনা করে এ বাজারে। শুক্রবারের বাজারে ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন এবং ৭টা বিক্রি করেছেন। দাম নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট।
হাটহাজারী উপজেলা থেকে গরু কিনতে আসা সাদেকসহ কয়েকজন ক্রেতা জানান, মানুষের মুখে শুনে প্রথমবার এ হাটে এসেছেন। ৯০ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় কিনেছেন। গরু এবং দাম নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। বিশেষ করে দেশীয় জাতের সব সাইজের গরু এখানে দেখছেন। রামগড় থেকে আসা গরু বিক্রেতা খায়ের আহমেদ জানান- তিনি বাড়িতে গরু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে দেশীয় পদ্ধতিতে চারটি গরু বড় করেছেন। এবার কোরবানিতে বিক্রি করবেন। দাম ওঠেছে। তবে একটু দাম বেশি পাওয়ার আশায় তিনি এখনো গরু বিক্রি করেননি। ডালিম নামে ফটিকছড়ি থেকে আসা এক ক্রেতা জানান- ব্যাপক গরু আছে। এককথায় যেমন প্রয়োজন তেমন গরু পাওয়া যায়। তবে দাম এখনো একটু বেশি মনে হচ্ছে। কয়েকটা গরু দেখেছেন। পছন্দ আর দরদামে মিললে নিয়ে নেবেন।